রাশিয়ার পশ্চিমের কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনাদের আক্রমণ চলেছে, যা রাশিয়ার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই হামলা ঠেকাতে রাশিয়া এখন জরুরি ভিত্তিতে বাড়তি সেনা মোতায়েন করেছে এবং সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে। ইউক্রেনের সাম্প্রতিক আক্রমণে কুরস্ক অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা বেড়ে গেছে, যার ফলে রাশিয়া দ্রুততর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত শনিবার রাশিয়ার ভেতরে তাদের বাহিনীর আক্রমণের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, ইউক্রেনীয় বাহিনী এই যুদ্ধকে ‘আগ্রাসীদের অঞ্চল’ দিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং রাশিয়ার জন্য এটি ছিল এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। হামলার ফলে রাশিয়া এখন সীমান্ত এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষকে সরিয়ে নিচ্ছে।
এই হামলা এখন ষষ্ঠ দিনে পৌঁছেছে এবং ইউক্রেনীয় সেনারা রাশিয়ার ভেতরে ২০ কিলোমিটার অগ্রসর হয়েছেন। রাশিয়া ইতোমধ্যে কুরস্ক অঞ্চল থেকে ৭৬ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে এবং সীমান্ত এলাকা থেকে লোকজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে।
মস্কোর ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সতর্ক হয়েছে এবং তাদের সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছে। বেলারুশের অভিযোগ, ইউক্রেন তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের আক্রমণে ১৪টি ড্রোন ও ৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া, অন্যান্য অঞ্চলে ইউক্রেনের ১৮টি ড্রোনও ধ্বংস করা হয়েছে। রুশ সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে এই আক্রমণ ক্রেমলিনের দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এটিকে বড় ধরনের উসকানি হিসেবে দেখছেন।
রাশিয়ার সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ দাবি করেছেন যে ইউক্রেনীয় হামলা ঠেকানো গেছে, তবে সীমান্তে এখনো কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। রুশ সামরিক ব্লগাররা জানিয়েছে, কুরস্ক অঞ্চলে পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল, তবে ইউক্রেনীয় বাহিনী দ্রুত সেখানে সেনা বাড়াচ্ছে।
ইউক্রেনের হামলায় গতকাল অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। হামলায় একজন নয়তলা ভবনের ওপর পড়ে আহত হন।
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়, কিয়েভ ও সুমি অঞ্চলে রাশিয়ার বোমা হামলা অব্যাহত রয়েছে। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটস্চকো বিমান হামলার সতর্কতা জারি করেছেন এবং বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের চিফ অব স্টাফ আন্দ্রে ইয়ারমাক রাশিয়ার সামরিক অবকাঠামোতে আরও হামলার ঘোষণা দিয়েছেন, এবং অভিযোগ করেছেন যে কিয়েভে হামলায় উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
এই আক্রমণের ফলে হাজারো সেনা কুরস্ক অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে এবং ইউক্রেনের বাহিনী রাশিয়ার ভিতরে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার চেষ্টা করছে। যদিও রাশিয়ার দাবি যে হাজারো সেনা তাদের দেশে অনুপ্রবেশ করেছে, ইউক্রেনের কর্মকর্তারা সেই দাবি অস্বীকার করছেন এবং হামলার বিস্তৃতি ঘটানোর জন্য অতিরিক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছেন।