**বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সম্প্রতি দেখা দিচ্ছে ভয়ঙ্কর বিষাক্ত রাসেল ভাইপার সাপ। দেশের বিশেষ করে যশোর, ভোলা, চট্টগ্রাম, এবং অন্যান্য কিছু অঞ্চলে এই সাপ আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে।**
রাসেল ভাইপার, বৈজ্ঞানিক নাম *Daboia russelii*, একটি অত্যন্ত বিষাক্ত সাপ যা সাধারণত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে পাওয়া যায়। এই সাপটি বিশেষ করে তার বিষাক্ততা এবং আক্রমণাত্মক স্বভাবের জন্য পরিচিত। শরীরের গড়ন গোলাকার ও চ্যাপ্টা এবং এদের মাথা ত্রিভুজাকৃতির। এই সাপটি সাধারণত ১-১.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সম্প্রতি রাসেল ভাইপার সাপের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে যশোর, ভোলা, এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে এই সাপের সংখ্যাধিক্য দেখা যাচ্ছে। এই সাপ সাধারণত শুষ্ক অঞ্চল, গ্রামীণ এলাকা এবং খামারের আশেপাশে বাস করে। তার প্রধান খাদ্য টিকটিকি, ব্যাঙ এবং ইঁদুর হওয়ায়, বসতবাড়ি এবং খামারের আশেপাশে এদের দেখা পাওয়া যায়।
রাসেল ভাইপারের কামড় অত্যন্ত বিপজ্জনক। কামড়ানোর সাথে সাথে বিষ দ্রুত রক্তপ্রবাহে মিশে যায় এবং নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে। রাসেল ভাইপারের বিষ মূলত প্রোটিন ধ্বংসকারী যা রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। এর ফলে রক্তক্ষরণ, রক্তচাপ কমে যাওয়া, কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া এবং তীব্র ব্যথার সৃষ্টি হয়।
কিছু সাধারণ লক্ষণ:
- কামড়ানোর স্থান থেকে শুরু করে পুরো অঙ্গে তীব্র ব্যথা
- কামড়ানোর স্থান ফুলে যাওয়া এবং লাল হয়ে যাওয়া
- শ্বাসকষ্ট এবং দ্রুত হৃদস্পন্দন
- বিষের প্রভাবে স্নায়ুতন্ত্র বিকল হয়ে যেতে পারে
- অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং রক্তচাপ হ্রাস পাওয়ার ফলে মৃত্যু
রাসেল ভাইপার কামড়ানোর পরপরই দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এন্টিভেনাম (Antivenom) দিলে জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা থাকলেও, অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতির মাত্রা এতটাই বেশি হয়ে যায় যে, চিকিৎসা সত্ত্বেও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।
রাসেল ভাইপার সাপের ডিম
রাসেল ভাইপার সাপ ডিম দেয় না, বরং সরাসরি বাচ্চা জন্ম দেয়। এরা একবারে ৪০ থেকে ৮০টি পর্যন্ত বাচ্চা জন্ম দিতে পারে, যা তাদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয় এবং বসতি অঞ্চলে এদের উপস্থিতি বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
রাসেল ভাইপার সম্পর্কে আরও জানার জন্য এবং তাদের আচরণ কেমন তা দেখতে নীচের ভিডিওগুলো দেখতে পারেন:
1. [রাসেল ভাইপার: সাপের দুনিয়ায়](https://www.youtube.com/watch?v=ExVpGZsLa9k)
2. [রাসেল ভাইপার: বেঁচে থাকার যুদ্ধ](https://www.youtube.com/watch?v=H7xPj7NfI58)
3. [রাসেল ভাইপার: বিষাক্ত এবং বিপজ্জনক](https://www.youtube.com/watch?v=Xen7FeiTV2g)
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাসেল ভাইপারের উপস্থিতি বাড়ছে বলে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকা জরুরি। নিচে কিছু সতর্কতা মূলক পদক্ষেপ দেওয়া হলো:
1. **বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার রাখুন**: রাসেল ভাইপার প্রধানত টিকটিকি, ব্যাঙ এবং ইঁদুর খেয়ে বেঁচে থাকে, তাই এগুলোর উপস্থিতি কমাতে হবে।
2. **জুতো ও পোশাক পরার আগে ভালো করে ঝেড়ে নিন**: রাসেল ভাইপার ছোট এবং অন্ধকার জায়গায় লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে।
3. **গভীর ঘাস এবং ঝোপঝাড় থেকে দূরে থাকুন**: এইসব জায়গায় রাসেল ভাইপার লুকিয়ে থাকতে পারে।
4. **রাতে হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন**: রাসেল ভাইপার প্রধানত রাতে শিকার করে, তাই অন্ধকারে হাঁটার সময় জ্বালানি নিয়ে হাঁটুন।
5. **চিকিৎসা ব্যবস্থা জোরদার করুন**: সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে দ্রুত এবং কার্যকর চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
রাসেল ভাইপার পিক
রাসেল ভাইপার সাপের ছবি দেখার জন্য আপনি উপরের ছবি দেখতে পারেন। এই ছবিতে সাপের গঠন এবং এর বিষাক্ততা সম্পর্কে একটি ধারণা পাবেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাসেল ভাইপার সাপের উপস্থিতি এবং এর বিষাক্ততার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। এ থেকে রক্ষা পেতে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা চালানো এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানো প্রয়োজন।
**আপনারা সবাই সাবধানে থাকুন এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা মেনে চলুন।**