রাসেল ভাইপার, বিশ্বের অন্যতম বিষাক্ত এবং ভয়ংকর সাপ, বাংলাদেশে ক্রমশ বিস্তার লাভ করছে। এই সাপের উপস্থিতি সাধারণ জনগণের জন্য এক বিরাট হুমকি। বিশেষ করে বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে রাসেল ভাইপারের কামড়ের ঘটনা বাড়ছে এবং তা নিয়ে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
রাসেল ভাইপার (বৈজ্ঞানিক নাম: **Daboia russelii**) একটি বিপজ্জনক বিষাক্ত সাপ যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিস্তৃত। সাপটি মূলত ভারতে পাওয়া যায়, তবে এখন বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, এবং ইন্দোনেশিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশে এর উপস্থিতি রয়েছে। এই সাপ সাধারণত গরম ও শুষ্ক পরিবেশে বাস করে, তবে এটি বিভিন্ন প্রকারের পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে।
রাসেল ভাইপার একটি মাঝারি আকারের সাপ যার গড় দৈর্ঘ্য ১.২ মিটার থেকে ১.৬ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর শরীর সাধারণত লালচে-বাদামি রঙের হয়ে থাকে, যার উপর গভীর সাদা অথবা হলুদ রঙের বড় বড় ফোটা থাকে। এ সাপটি পরিচিত হয় তার তীক্ষ্ণ এবং গভীর বিষের জন্য।
রাসেল ভাইপারের বিষ অত্যন্ত শক্তিশালী এবং এর কামড় মারাত্মক হতে পারে। কামড়ানোর পর বিষ শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে:
প্রাথমিক লক্ষণ: ব্যথা, ফোলাভাব এবং রক্তক্ষরণ।
গুরুতর লক্ষণ:তীব্র রক্তপাত, রক্তচাপ কমে যাওয়া, রক্ত জমাট বাধা সমস্যা, এবং কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়া।
জীবনের জন্য হুমকি:যদি দ্রুত চিকিৎসা না করা হয়, বিষক্রিয়ার ফলে মৃত্যুও হতে পারে।
রাসেল ভাইপারের কামড়ের পর প্রথমেই জরুরী চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা নিতে দেরি হলে বিষক্রিয়ার ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কামড়ের পর যা করতে হবে:
1. **শান্ত থাকতে হবে:** ভীতি এবং তাড়াহুড়ো করলে বিষ দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
2. **আক্রান্ত স্থানটি স্থির রাখতে হবে:** সাপের কামড়ানো স্থানটি যতটা সম্ভব কম নড়াচড়া করতে হবে।
3. **জরুরি চিকিৎসা সেবা:** দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে হবে এবং সেখানে এন্টিভেনমের সাহায্যে চিকিৎসা নিতে হবে।
বাংলাদেশের কিছু অঞ্চল, বিশেষ করে রাজশাহী, দিনাজপুর এবং ময়মনসিংহে রাসেল ভাইপারের উপস্থিতি বেড়েছে। এ সাপগুলি সাধারণত গ্রামের মাঠে এবং বাড়ির আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়। বিশেষ করে কৃষকদের এবং গ্রামীণ লোকজনের জন্য এটি একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাসেল ভাইপার সাপের প্রজনন সাধারণত বর্ষাকালে হয়। এ সময় মাদী সাপ ডিম পাড়ে এবং প্রায় ২০ থেকে ৬৫ টি ডিম দিতে পারে। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে উঠতে প্রায় ৪৫ থেকে ৬০ দিন সময় লাগে।
রাসেল ভাইপার সাপ দেখলে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এ ধরনের বিষাক্ত সাপের কাছাকাছি যাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। রাসেল ভাইপার দেখলে যা করতে হবে:
1. **সুরক্ষিত দূরত্ব বজায় রাখা:** সাপকে বিরক্ত না করে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন।
2. **স্থানীয় সাপ ধরার দলকে খবর দেওয়া:** বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় সাপটিকে ধরার ব্যবস্থা করতে হবে।
3. **বাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখা:** সাপ লুকানোর জন্য ঝোপঝাড়, ময়লা এবং অন্যান্য আবর্জনা পরিস্কার রাখা উচিত।
রাসেল ভাইপারের বিষাক্ত কামড় ও এর প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এবং এই সাপের ভিডিও দেখতে গুগলে সার্চ করুন “রাসেল ভাইপার ভিডিও” অথবা “রাসেল ভাইপার পিক”। এছাড়া, রাসেল ভাইপার সাপের আচরণ এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আরও জানতে “রাসেল ভাইপার কি” এবং “রাসেল ভাইপার সম্পর্কে” ট্যাগগুলি ব্যবহার করতে পারেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাসেল ভাইপারের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সাপ ধরার দল এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি কাজ করছে। সরকার এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের উদ্যোগে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রাসেল ভাইপারের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।