বাংলাদেশের শহরগুলোতে তরুণ-তরুণীদের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, শহরের আবর্জনা পরিষ্কার করা এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয় রক্ষা করার চিত্র সারা বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা করছেন এবং অনেকেই দেশের ক্রান্তিকালে নিজেদের মেধা ও সম্পদ দিয়ে সাহায্য করার সুযোগ খুঁজছেন।
বর্তমানে প্রবাসীরা মূলত প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। কিন্তু, অনেক প্রবাসী আছেন যারা রেমিট্যান্সের বাইরে গিয়ে আরো গভীরভাবে দেশের উন্নয়নে সহায়তা করতে চান। তাদের মধ্যে অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উচ্চশিক্ষিত, দক্ষ এবং ধনী, যারা তাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং সম্পদ দিয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
একসময় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং স্যার ফজলে হাসান আবেদদের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রবাসী জীবন ত্যাগ করে বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক প্রকল্পে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং অসংখ্য মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। তাদের সফলতা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। তবে গত এক দশক ধরে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সংস্কৃতি প্রবাসী প্রতিভাদের দেশে ফিরে আসা ও অবদান রাখার ক্ষেত্রে অনুকূল ছিল না। রাজনৈতিক দলীয়করণের কারণে অনেক মেধাবী ও সৃজনশীল ব্যক্তি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। যারা দেশেই রয়ে গেছেন, তারা অনেক সময় ক্ষমতাসীনদের প্রভাবে দাসত্ব বা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
২০০৬-০৮ সময়কালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দক্ষ প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছিলেন, দেশ পুনর্গঠন এবং জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য। এই সময়টি প্রবাসীদের জন্য একটি রাজনৈতিক উত্তরণের সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। বিশেষ করে যারা ব্যবসা, প্রযুক্তি এবং গবেষণার ক্ষেত্রে দক্ষ ছিলেন, তারা দেশে ফিরে এসে তাদের দক্ষতা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন।
যদিও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কিছু সংস্কারের চেষ্টা হয়েছিল, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতায় ফিরে আসার পর অনেক সংস্কার স্থগিত হয়ে যায়। এই সময় দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনের সুযোগ হারিয়ে ফেলতে সাহায্য করেছিল। ফলস্বরূপ, প্রবাসীদের প্রত্যাশা অপূর্ণ থাকে এবং বেশিরভাগ প্রবাসী আবারও বিদেশে ফিরে যান।
এখনও বাংলাদেশে প্রবাসীদের মেধা ও সম্পদের সম্ভাবনা রয়েছে, এবং তাদের অবদান দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে নতুন দিক দেখাতে পারে। দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের জন্য পরিবেশ আরো উন্নত হলে, তারা নিজেদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।