**শেখ হাসিনা** বাংলাদেশের ১০ম এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনীতিক। তার দীর্ঘ এবং উত্তাল রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, যা তাকে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ব্যক্তিগত জীবন
- **পুরো নাম:** শেখ হাসিনা ওয়াজেদ
- **জন্ম:** ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭
- **জন্মস্থান:** টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, বাংলাদেশ
- **পিতা:** শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি এবং জাতির পিতা
- **মাতা:** বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব
- **স্বামী:** প্রয়াত এম এ ওয়াজেদ মিয়া, একজন প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী
- **সন্তান:** সজীব ওয়াজেদ জয় (পুত্র), সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (কন্যা)
শিক্ষা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: আজিমপুর গার্লস স্কুল, ঢাকা
ইডেন কলেজ, ঢাকা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন
প্রাথমিক বছর
প্রথম রাজনীতি: শেখ হাসিনা তার ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন।
প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী:১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
1. স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা: তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।
2.জীবনের সংগ্রাম:১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, তার পিতা এবং পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেই সময় তিনি এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা জার্মানিতে ছিলেন, যা তাদেরকে জীবন রক্ষা করতে সাহায্য করে।
3.আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব:১৯৮১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং দলের নতুন দিশা নির্দেশনায় তার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
প্রথম মেয়াদ: ১৯৯৬ - ২০০১
দ্বিতীয় মেয়াদ: ২০০৯ - ২০১৪
তৃতীয় মেয়াদ: ২০১৪ - ২০১৮
চতুর্থ মেয়াদ: ২০১৯ - বর্তমান
1. ডিজিটাল বাংলাদেশ: শেখ হাসিনা তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যাপক উন্নয়নের দিকে লক্ষ্য রেখে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এর ফলে দেশের তরুণ প্রজন্ম এবং উদ্যোক্তারা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বৈশ্বিক মানচিত্রে নিজেদের স্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
2.পদ্মা সেতু: দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন যা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলের সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
3. উন্নয়ন পরিকল্পনা: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এই লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে।
4. নারীর ক্ষমতায়ন: নারী শিক্ষার প্রসার এবং নারী কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যা দেশের অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়িয়েছে।
5. স্বাস্থ্যখাত: কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা এবং স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
6. বিদ্যুৎ উৎপাদন: বিদ্যুৎখাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধন করে দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্থিতিশীল করেছেন।
7. রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট:২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে আসা লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে মানবিক সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। উল্লেখযোগ্য কিছু সম্মাননা হলো:
ইউনেস্কোর শান্তি পদক: শিক্ষা এবং শান্তি প্রচেষ্টার জন্য।
মাদার তেরেসা পদক: শান্তি এবং সামাজিক কর্মে অবদানের জন্য।
আইসিসিএএএডি পদক: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অসামান্য অবদানের জন্য।
1. রাজনৈতিক সহিংসতা: তার শাসনামলে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
2. স্বাধীন মতপ্রকাশের সীমাবদ্ধতা: সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা এবং মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে।
3. স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার প্রশ্ন: কিছু ক্ষেত্রে বিচার ব্যবস্থায় সরকারের প্রভাব নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
শেখ হাসিনা একজন সাহসী এবং দৃঢ়চেতা নারী হিসেবে পরিচিত। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি তার পরিবারকেও গুরুত্ব দেন। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন এবং তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম সচেতনতার জন্য কাজ করছেন। শেখ হাসিনা একজন ভক্ত মুসলমান এবং ধর্মীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দেন।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তার জীবন কাহিনী এবং কর্মধারা দেশের উন্নয়ন এবং অগ্রগতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নন, বরং একজন মমতাময়ী মা, ধর্মপ্রাণ মুসলিম, এবং সর্বোপরি একজন মানবিক নেতা, যিনি সবসময় তার দেশের কল্যাণে কাজ করেছেন।