৫ আগস্ট বিকেল পাঁচটার দিকে, মেহেরপুরের মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। সরকারের পতনের গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর শতাধিক দুর্বৃত্ত সেখানে হানা দেয় এবং ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যগুলো ধ্বংস করে ফেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, যুবকরা রড, বাঁশ ও হাতুড়ি নিয়ে কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে। প্রথমে তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের মাথা ভেঙে দেয় এবং গার্ড অব অনার ভাস্কর্যটিতে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে। পরে, তারা পাকিস্তানের আত্মসমর্থনের ভাস্কর্যগুলোতেও হামলা চালায়, তবে সেগুলোর ভাঙচুর তুলনামূলকভাবে কম হয়। এরপর, মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের আদলে তৈরি ছোট ভাস্কর্যগুলোও ভেঙে ফেলে এবং শহীদ স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটকটিও খুলে নিয়ে যায়।
মুজিবনগর কমপ্লেক্সের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য হুমায়ূন আহমেদ জানান, মোট ৬০০টি ভাস্কর্য ধ্বংস করা হয়েছে। ভাস্কর্যগুলো পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ ছিল এবং প্রতিদিন এখানে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসতেন। কমপ্লেক্সের ভাস্কর্যগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং লুটপাট চালানো হয়েছে।
অন্যদিকে, টুরিস্ট পুলিশের সদস্য আবজাল শেখ বলেন, প্রথমে বিকেলে যুবকরা শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যই ভাঙচুর করে চলে যায়। পরে রাতের দিকে তারা আবার ফিরে এসে কমপ্লেক্সের বিভিন্ন অংশে হামলা চালায় এবং আনসার ক্যাম্পে এসে অফিস ভাঙচুর করে এবং সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে যায়।
মুজিবনগর আম্রকাননের চায়ের দোকানি তামিম হোসেন জানান, দুর্বৃত্তরা কমপ্লেক্সে প্রবেশ করার সময় চায়ের দোকানিরা ও অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মীরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ও আনসার সদস্যরা নিজেদের জীবন বাঁচাতে সরিয়ে যায়, ফলে দুর্বৃত্তরা ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সুযোগ পায়।
কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুবেদার রবিউল ইসলাম বলেন, দুর্বৃত্তরা হামলা শুরু করার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সহায়তার জন্য যোগাযোগ করা হয়, তবে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। এ কারণে আনসার সদস্যরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যারাকে অবস্থান নেন।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, মুজিবনগর কমপ্লেক্সের মূল ফটকে কোনো নিরাপত্তাকর্মী নেই। সাধারণত সেখানে চারজন আনসার সদস্য মোতায়েন থাকতেন, যারা দর্শনার্থীদের পরিচয় নিশ্চিত করে প্রবেশে অনুমতি দিতেন। এখন সেখানকার ভাস্কর্যগুলো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে পড়ে আছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটির মাথা ভেঙে দেওয়া হয়েছে, গার্ড অব অনার ভাস্কর্যগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং দেশের মানচিত্রের ওপরে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধকালীন সেক্টরের আদলে তৈরি ভাস্কর্যগুলো পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে।
মুজিবনগর ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান, যেখানে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে এখানে ১৯৮৭ সালে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ এবং ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স স্থাপন করা হয়। এই স্থানটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহসান খান জানান, পুলিশের নিরাপত্তাহীনতার সুযোগে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। এখন পুলিশ কার্যক্রম শুরু করেছে এবং তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
https://slotbet.online/