সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে সম্পূর্ণ মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তৃতীয় দিনের মতো বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। আজ বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে শুরু হওয়া এই অবরোধ কর্মসূচিতে মহাসড়কের দুই পাশে অসংখ্য যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়ে চরম ভোগান্তির শিকার হয়। ঘোষিত চার দফা দাবি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। বেলা পৌনে দুটা পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন এবং তা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে এসে শেষ হয়। মহাসড়কে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা ‘কাফনের কাপড়’ পরে আন্দোলন করেন, যা তাদের আন্দোলনের প্রতীকী শক্তি প্রদর্শন করে।
অবরোধের কারণে এই রুটে চলাচলকারী অনেক যাত্রীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। নলছিটি থেকে আসা যাত্রী নুরে আলম শরীফ জানান, ‘আমরা শান্তি চাই। তাঁদের (শিক্ষার্থীদের) আন্দোলনও চলুক, আমাদের চলাচলের পথও খোলা থাকুক। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়ে বরিশাল যাচ্ছি। অনেকক্ষণ ধরে যানবাহনগুলো আটকে আছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি কাজে বিঘ্ন ঘটছে।’
বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে বৈষম্য মেনে নেওয়া হবে না। শিক্ষার্থীরা আদিবাসী ও প্রতিবন্ধী কোটা বাদে সব বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবি জানান। তাঁদের মতে, ৫৬ শতাংশ কোটা কোনো দেশের স্বাভাবিক অবস্থা হতে পারে না। মেধাবীরা পরিশ্রম করে চাকরি পাবেন, কোটার মাধ্যমে নয়। কোটা প্রথা কখনোই জাতির কল্যাণ বয়ে আনবে না। এটা দেশের মেধাবীদের সঙ্গে এক ধরনের উপহাস।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সেঁজুতি বলেন, ‘আমরা কোটা চাই না। অবিলম্বে কোটা বাতিল চাই। আশা করি, কোটা বাতিল করে আদালত রায় প্রদান করবেন। যদি কোটা বাতিল না হয়, তাহলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আবদুল কাইউম জানান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে অবরোধ প্রত্যাহারের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যে অবরোধ প্রত্যাহার নেবে শিক্ষার্থীরা।’
গত ৫ জুন সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ রায় দেন।