খুলনার ভবিষ্যৎ পরিচালনা এবং পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে মতামত প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। গতকাল শুক্রবার বিকেলে খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মোজাম্মেল হকের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তাঁরা তাদের অভিমত তুলে ধরেন।
বিকেল ৪টায় খুলনা মহানগর পুলিশের সদর দপ্তরে শুরু হওয়া সভাটি সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়মান আহাদের সঞ্চালনায় সভায় ১৯ জন আন্দোলনকারী ও শিক্ষার্থী তাদের মতামত এবং দাবির কথা তুলে ধরেন। সভার শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ ও রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ অন্যান্য নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হয়।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম প্রথম বক্তা হিসেবে বলেন, তারা চান ভবিষ্যতে পুলিশ কোনো নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ না করুক এবং জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করুক। তিনি উল্লেখ করেন, খুলনা জেলা ও নগরের পুলিশকে দুর্নীতি এবং অনিয়ম মুক্ত রাখতে হবে এবং সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। পুলিশ সদস্যদের অপরাধীকে আশ্রয় দিলে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
উপস্থিত খুলনার সমন্বয়ক জহুরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো দ্রুত সমাধান করা দরকার। তিনি দাবি করেন, পুলিশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং অভিযোগিত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি এও বলেন যে, পুলিশকে সংস্কার করে মাঠে সক্রিয় হতে হবে এবং কোনও ধরনের লিয়াজোঁভিত্তিক প্রশাসন নয়, বরং আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহসমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম মন্তব্য করেন, খুলনার অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তাদের দ্রুত প্রত্যাহার করা উচিত এবং আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও প্রাণনাশের ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতাদের গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন। তিনি আরও দাবি করেন, স্থানীয় পুলিশিং কমিটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং কলেজ ক্যাম্পাসে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের সমন্বয়ক সামিয়া সানজানা বলেন, খুলনার পুলিশকে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের অধীনে কাজ করতে দেওয়া উচিত নয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের আগে কলেজ প্রশাসনকে অবহিত করার দাবি করেন তিনি এবং দ্রব্যমূল্য ও পরিবহন ভাড়া নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও উল্লেখ করেন।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সমন্বয়ক ওমর ফারুক বলেন, কোটার মাধ্যমে চাকরি পাওয়া পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত এবং কুয়েটের ভিসি ও তাঁর অনুগতদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে।
সভায় শিক্ষার্থীরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের খাবার মান ও অন্যান্য দুর্নীতি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত রিকশা ও বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল শাহরিয়ার, মিনহাজুল ইসলাম, বিপুল শাহরিয়ার, সাইফ নেওয়াজ, শাহাবুল, সরকারি আযম খান কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী শেখ রাফসান, তারেক রহমান, ব্রজলাল কলেজের শিক্ষার্থী রুমি আক্তার, খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মুস্তফা জায়েদ, সরকারি পাইওনিয়ার কলেজের শিক্ষার্থী সাবিকুন নাহার, রাইসা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মতবিনিময় সভার শেষে কেএমপি কমিশনার মোজাম্মেল হক বলেন, থানার সাধারণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং প্রতিমাসে সমন্বয়কদের সাথে সভা অনুষ্ঠিত হবে। থানাভিত্তিক পুলিশিং কমিটিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের রাখা হবে এবং কিছু দিনের মধ্যে ওয়ার্ড পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি থাকবে। খুলনার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার ২৪ ঘণ্টা কার্যকর থাকবে এবং অতীতের ঘটনা ভুলে গিয়ে পুলিশকে দলভিত্তিক আচরণ থেকে বিরত রাখতে বলা হবে। ব্রজলাল কলেজে অস্থায়ী এবং পরে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার কথা জানান তিনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করলে নির্মোহভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অভিযোগিত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে মন্তব্য করেন মোজাম্মেল হক।