(প্রাইম ভিশন ২৪): গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে শীতল থাকার জন্য এয়ার কন্ডিশনার (এসি) আমাদের অতি প্রয়োজনীয় সঙ্গী। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এসির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসি বিস্ফোরণের ঘটনাও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে কিছু নির্দিষ্ট শব্দ এসি বিস্ফোরণের পূর্বাভাস হতে পারে, যা জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ।

এসি বিস্ফোরণের কারণ

গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহে এসির অতিরিক্ত ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, এবং বৈদ্যুতিক সমস্যা এসি বিস্ফোরণের মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। এসি বিস্ফোরণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

1. **অতিরিক্ত চাপ:** অত্যধিক তাপের কারণে সংকোচকের উপর চাপ সৃষ্টি হয়, যা বিস্ফোরণের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
2. **ইলেকট্রিক্যাল শর্ট সার্কিট:** ইলেকট্রিক্যাল ফটক বা শর্ট সার্কিটও বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে।
3. **রেফ্রিজারেন্ট লিকেজ:** গ্যাসের লিকেজ বা রেফ্রিজারেন্টের অপর্যাপ্ততা এসির অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়িয়ে বিস্ফোরণের ঝুঁকি বাড়ায়।
4. **অনিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ:** সময়মত পরিষ্কার এবং মেরামত না করার ফলে এসির অভ্যন্তরীণ সমস্যা বাড়তে পারে।

সম্ভাব্য এসি বিস্ফোরণের পূর্বাভাস দেয় এমন শব্দ

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, এসি বিস্ফোরণের আগে কিছু নির্দিষ্ট শব্দ শোনা যেতে পারে, যা ব্যবহারকারীদের সতর্ক করার জন্য যথেষ্ট:

1. **হিশিং শব্দ:** এটি সাধারণত গ্যাস বা রেফ্রিজারেন্ট লিকের সংকেত দেয়।
2. **গর্জন বা গোঁ গোঁ শব্দ:** সংকোচক বা ফ্যানের সমস্যার কারণে এই ধরনের শব্দ হতে পারে।
3. **পপিং বা বিস্ফোরণের মতো শব্দ:** ইলেকট্রিক্যাল সমস্যা বা অভ্যন্তরীণ চাপ বৃদ্ধির কারণে এই শব্দ হতে পারে।
4. **ক্লিকিং শব্দ:** এটি ইলেকট্রিক্যাল রিলে বা সংযোগে ত্রুটি নির্দেশ করতে পারে।
5. **গুঞ্জন বা ভাইব্রেশন শব্দ:** ফ্যান বা মোটরের অসামঞ্জস্যতা বা ঢিলা হয়ে যাওয়ার কারণে এই শব্দ শোনা যেতে পারে।
6. **ঘষা বা স্ক্র্যাচিং শব্দ:** মেটাল বা অন্যান্য উপাদানের ঘর্ষণ থেকে এই শব্দ সৃষ্টি হতে পারে।
7. **শিস বা সিটি-ধ্বনি:** এটি সাধারণত রেফ্রিজারেন্ট লিক বা প্রেসার ইস্যুর ইঙ্গিত দেয়।

সতর্কতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

এসির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং সতর্কতা প্রয়োজন যাতে এই ধরণের বিপজ্জনক পরিস্থিতি এড়ানো যায়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, এসি ব্যবহারকারীদের নিম্নলিখিত প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত:

– **নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ:** এসির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে এর প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি।
– **অস্বাভাবিক শব্দের প্রতি সতর্কতা:** এসি থেকে অস্বাভাবিক কোনো শব্দ শুনলে তৎক্ষণাৎ পেশাদার টেকনিশিয়ানের সাহায্য নিন।
– **সঠিক ইনস্টলেশন:** এসি সঠিকভাবে ইনস্টল করা এবং ম্যানুয়াল অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত।
– **পেশাদার পরীক্ষা:** নিয়মিতভাবে পেশাদারদের দ্বারা এসি পরীক্ষা করানো জরুরি।
– **গ্যাস বা লিক চেক:** রেফ্রিজারেন্ট গ্যাসের লিক বা স্বাভাবিক কার্যক্রমের মধ্যে কোনো সমস্যা থাকলে তা দ্রুত ঠিক করান।

 বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক এসি বিস্ফোরণের ঘটনা

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে এয়ার কন্ডিশনার (এসি) বিস্ফোরণের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এই বিস্ফোরণের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও আহতের খবর পাওয়া গেছে। নিচে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া এসি বিস্ফোরণের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার বিবরণ দেওয়া হলো:

১. ঢাকা: বনানী এপিএন টাওয়ারে এসি বিস্ফোরণ

**তারিখ:** ২৯ মার্চ ২০১৯

 ঢাকার বনানী এলাকায় এপিএন টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এই ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে এসি বিস্ফোরণকে দায়ী করা হয়। এসি বিস্ফোরণের ফলে টাওয়ারের ১০ তলা থেকে অগ্নিকাণ্ড শুরু হয় যা পরে ১৯ তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু এবং অনেক মানুষ আহত হন। অগ্নিকাণ্ডে সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

২. চট্টগ্রাম: ফয়সাল ব্যাংক ভবনে বিস্ফোরণ

তারিখ:  ১৮ নভেম্বর ২০২০

চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ এলাকায় অবস্থিত ফয়সাল ব্যাংক ভবনের নিচতলায় এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের ফলে ভবনের সামনের অংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় এবং এ ঘটনায় ৭ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হন। বিস্ফোরণের ফলে আগুন লেগে যায় এবং ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

৩. নারায়ণগঞ্জ: ফতুল্লায় মসজিদে এসি বিস্ফোরণ

**তারিখ:** ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

 নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে জুমার নামাজের পর এসির বিস্ফোরণ ঘটে। এই বিস্ফোরণের ফলে মসজিদের ভেতর থাকা প্রায় ৫০ জন মুসল্লী আহত হন, যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। পরে এই ঘটনার ৩৭ জনের মৃত্যু হয়। এই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে এসির সাথে থাকা গ্যাস পাইপের লিকেজ থেকে গ্যাসের জমাট বাঁধা এবং বিদ্যুৎ সংযোগের ফলে বিস্ফোরণকে চিহ্নিত করা হয়।

 ৪. রাজশাহী: নিউ মার্কেটে এসি বিস্ফোরণ

তারিখ: ১২ মে ২০২১

রাজশাহীর নিউ মার্কেট এলাকায় একটি কাপড়ের দোকানে এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের ফলে দোকানের শো-কেস, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য জিনিসপত্র ধ্বংস হয়ে যায়। দোকানের মালিক এবং আরও তিনজন কর্মচারী বিস্ফোরণের ফলে দগ্ধ হন এবং পরে তাদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়।

৫. সিলেট: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসি বিস্ফোরণ

**তারিখ:** ২২ জুন ২০২২

 সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রশাসনিক ভবনের কক্ষে এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ঐ কক্ষের বেশ কয়েকজন কর্মচারী আহত হন। বিস্ফোরণের ফলে কক্ষের আসবাবপত্র এবং কম্পিউটার সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৬. কুমিল্লা: সোনালী ব্যাংকে এসি বিস্ফোরণ

**তারিখ:** ১৭ জানুয়ারি ২০২৩

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার সোনালী ব্যাংক শাখায় এসির বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের ফলে ব্যাংক কর্মচারী এবং গ্রাহক সহ ১০ জন আহত হন। বিস্ফোরণের ফলে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অংশের ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং সেবাগ্রহণে আসা গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

 খুলনা: রূপসা ঘাটের একটি দোকানে এসি বিস্ফোরণ

**তারিখ:** ৫ জুলাই ২০২৩

খুলনার রূপসা ঘাট এলাকায় একটি ইলেকট্রনিক্স দোকানে এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে দোকানের মালিক সহ আরও দুইজন গুরুতর আহত হন। বিস্ফোরণের ফলে দোকানের ভিতরের বেশিরভাগ জিনিসপত্র ধ্বংস হয়ে যায় এবং আশেপাশের দোকানগুলিতেও আংশিক ক্ষতি হয়।

এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে এসির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং সময়মত মেরামত করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি, এসি থেকে কোনো অস্বাভাবিক শব্দ বা গন্ধ পাওয়া গেলে তা অবহেলা না করে দ্রুত পেশাদার টেকনিশিয়ানের সাহায্য নেওয়া উচিত।