বাংলাদেশ ব্যাংকে চরম অস্থিরতা শুরু হয়েছে। বিক্ষুব্ধ একদল কর্মকর্তা ও কর্মচারী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা এবং আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল করেন। এক পর্যায়ে তাঁরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল ভবনে অবস্থিত গভর্নরের ফ্লোরে ঢুকে একজন ডেপুটি গভর্নরকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, চার ডেপুটি গভর্নর এবং আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধান বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেছেন এবং যারা কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেরিয়ে গেছেন। এ সময় সেনাসদস্যরা তাঁদের নিরাপত্তা দেন। তবে ঘটনার সময় গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার কার্যালয়ে ছিলেন না।

বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনো ব্যানার বহন করছিলেন না। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এই বিক্ষোভে যোগ দেন। তাঁদের দাবি, ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব শীর্ষ কর্মকর্তা দায়ী এবং তাঁরা দায়িত্বে থাকলে ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরবে না।

বিক্ষোভকারীরা প্রথমে ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানের কক্ষে ঢুকে তাঁকে পদত্যাগে চাপ দেন। কাজী ছাইদুর রহমান একটি সাদা কাগজে পদত্যাগপত্র লিখে স্বাক্ষর করেন এবং ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যান।

বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এরপর ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহারের কক্ষে যান। নুরুন নাহার জানান, তিনি কার্যালয় ত্যাগ করছেন। বাকি দুই ডেপুটি গভর্নর মো. খুরশীদ আলম ও মো. হাবিবুর রহমান কার্যালয়ে ছিলেন না, তবে তাঁরা ফোনে জানিয়েছেন, তাঁরা অফিসে আর আসবেন না। একইভাবে ব্যাংকের উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাসের এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাসুদ বিশ্বাসও জানিয়েছেন, তাঁরা আর ব্যাংকে আসবেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ এই কর্মকর্তারা সবাই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্বাহী পরিচালক ১ জাকির হোসেন চৌধুরীকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ঘোষণা করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই অস্থিরতা ব্যাংক খাতের সুশাসন এবং স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় আঘাত। দ্রুত সমাধান না হলে দেশের আর্থিক খাতে এর প্রভাব পড়তে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।