• বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০১:৩৭ অপরাহ্ন

চট্টগ্রামে নৌকা-ফেরির সংঘর্ষ: ‘ভাইয়ের লাশটা যেন পাই’

Reporter Name / ১১১ Time View
Update : রবিবার, ২৩ জুন, ২০২৪

কর্ণফুলী নদীর বুকে হারিয়ে গেছেন চট্টগ্রামের পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর পরিচালক আশরাফ উদ্দিন (৫৩)। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী একটি নৌকা থেমে থাকা ফেরির সঙ্গে সংঘর্ষে তলিয়ে যান তিনি। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা নদীতে তল্লাশি চালিয়ে গেলেও এখনও মেলেনি তাঁর খোঁজ। আজ রবিবার সকাল থেকে নতুন উদ্যমে তল্লাশি চালাচ্ছেন তারা।

শনিবার সন্ধ্যায় কালুরঘাটের ফেরিঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী নৌকাটি প্রবল স্রোতে থেমে থাকা ফেরির সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে নৌকায় থাকা আশরাফ উদ্দিনসহ দুইজন পানিতে পড়ে যান। অন্যজন সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও আশরাফ তলিয়ে যান কর্ণফুলীর গভীরে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। নদীর পাড়ে ভিড় জমায় আশরাফের আত্মীয়স্বজন এবং স্থানীয়রা।

মাত্র ৪১ দিন আগে আশরাফ উদ্দিনের মা দিলোয়ারা বেগম বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। মায়ের মৃত্যুর শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই পরিবারের উপর নেমে এসেছে নতুন এই বিপর্যয়। আশরাফ উদ্দিনের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আগের দিন, শুক্রবার, মায়ের মৃত্যুর ৪০ দিন পূর্তির ধর্মীয় আচার পালন করেছিলেন তিনি।

আশরাফ উদ্দিন ছিলেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গোমদণ্ডীর শেখপাড়ার বিডিআরের অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার মেজর প্রয়াত হাবিবুর রহমানের ছেলে। তাঁর দুই সন্তান রয়েছে – বড় ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে এবং ছোট মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

আজ রবিবারও সকাল থেকে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আশরাফের চাচাতো ভাই আবদুল মজিদ। যেখানে আশরাফ তলিয়ে গেছেন, তার পাশেই আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। আশার প্রদীপ ধীরে ধীরে নিভে গেলেও, ভাইয়ের লাশ পাওয়ার আকুতি প্রকাশ করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন আবদুল মজিদ। তিনি প্রাইম ভিশন ২৪ কে বলেন, “ভাইয়ের বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছি। এখন শুধু লাশ পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। বাড়িতে আশরাফের স্ত্রী-সন্তানেরা অপেক্ষায় আছে লাশের জন্য। দোয়া করেন অন্তত লাশটি যেন পাই।”

আশরাফ উদ্দিনের খোঁজে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সঙ্গে নৌকায় উঠে পড়েন আবদুল মজিদ। নৌকায় করে নদীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু বিফল চেষ্টা। স্বজনদের আকুতি এখনও অব্যাহত। আশরাফের স্ত্রীর বড় ভাই, স্কুলশিক্ষক হেলাল উদ্দিন বলেন, “গতকাল সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেছি। এখনও খুঁজছি। আশরাফের এমন পরিণতি মেনে নেওয়া আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর। আশরাফ নিজেই সবসময় আমাদের নৌকার পরিবর্তে ফেরি ব্যবহারের পরামর্শ দিতেন, যাতে কোনো দুর্ঘটনায় না পড়ি। কিন্তু তিনি নিজেই কী মনে করে নৌকায় উঠতে গেলেন তা আমরা বুঝতে পারছি না।”

চট্টগ্রামের কালুরঘাট ফায়ার স্টেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোহাম্মদ বাহার উদ্দিন জানিয়েছেন, আশরাফ উদ্দিনের খোঁজে কালুরঘাট থেকে নতুন ব্রিজ এলাকা পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার অংশে তল্লাশি চালানো হয়েছে। “নদীর ভাটির অংশে তল্লাশি চালানো হয়েছে। এখন উজানের দিকে খোঁজ চলছে,” বলেন তিনি।

চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু সংস্কারকাজের জন্য যান চলাচল বন্ধ রয়েছে, তাই বিকল্প হিসেবে ফেরি চালু করা হয়েছে। তবে ফেরির পাশাপাশি মানুষ নৌকাতেও পারাপার হয়। এই পারাপারের সময়েই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

এই দুর্ঘটনা চট্টগ্রামের নদী পারাপার ব্যবস্থায় নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কর্ণফুলী নদীতে পারাপারকারী মানুষের নিরাপত্তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের নজরদারি জরুরি হয়ে উঠেছে। নদীতে পারাপারের সময় নৌকা ও ফেরির সংঘর্ষ এড়াতে সকল যাত্রীর সচেতনতা এবং সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক।

এখন শুধু অপেক্ষা, পরিবার ও প্রিয়জনের আশায় কর্ণফুলীর তীরে দৃষ্টি স্থাপন করা। আশরাফ উদ্দিনের লাশ ফিরে আসুক, এই কামনা করছেন সকলে।


More News Of This Category
https://slotbet.online/