• শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ০১:৫০ পূর্বাহ্ন

অত্মদানকারী ছাত্রদের প্রত্যাশা পূরণের প্রয়োজন

Reporter Name / ৩২ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০২৪

প্রথমেই জেনারেশন জেড নামে পরিচিত আন্দোলনকারী ছাত্রদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আমরা অনেকেই মনে করতে শুরু করেছিলাম যে, আমাদের জীবদ্দশায় দেশ মুক্তির আলো দেখতে পাব না। তারা ১৬ বছরের দীর্ঘ স্বৈরাচার, অপশাসন ও নির্যাতন থেকে দেশকে মুক্ত করেছে। এই দীর্ঘ সময়কালে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম হলেও সেগুলি ফলপ্রসূ হয়নি। কিন্তু ছাত্ররা কেন সফল হলো, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

ছাত্রদের আন্দোলনের সফলতার কারণ

আমার মতে, ছাত্রদের আন্দোলনের সাফল্যের প্রধান তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, অন্য আন্দোলনগুলো সাধারণত একটি স্থিতাবস্থার পরিবর্তে আরেকটি বিকল্প স্থিতাবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে, যেখানে পুরনো কুশীলবদের পরিবর্তন হবে এবং নতুন নেতৃত্ব আসবে। কিন্তু ছাত্রদের আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল সম্পূর্ণ পরিবর্তন, শোষণ ও নির্যাতনমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

দ্বিতীয়ত, একটি ঘটনার উল্লেখ করা উচিত। ৫ আগস্ট ভোররাতে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রাক্তন ছাত্রীর ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা যায় যে, তিনি ছাত্রদের খাবার ও পানি সরবরাহ করছিলেন। পোস্টে তিনি লেখেন, “আমি যাদের চিনি তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। যদি আমি জীবিত ফিরে না আসি, তবে আমাকে ক্ষমা করবেন।” তার এই আত্মত্যাগ ও সংকল্প অন্য আন্দোলনকারীদের মধ্যে দেখা যায়নি।

তৃতীয়ত, ছাত্রদের পূর্বপ্রস্তুতি ছিল অত্যন্ত ভালো। তারা ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়ে ২০২৪ সালের আন্দোলনে উদ্ভাবনী কৌশল প্রয়োগ করেছে, যা জনগণের সাড়া পেয়েছে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক দলের আন্দোলনগুলো ছিল গতানুগতিক।

জেনারেশন জেডের প্রত্যাশা

এই প্রজন্ম এমন একটি সমাজ চায় যেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের লক্ষ্যও ছিল মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান। ছাত্ররা একটি শোষণমুক্ত, গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে, যেখানে জনগণের প্রতিবাদের ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার থাকবে। নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের মাধ্যমে ছাত্ররা তাদের এই প্রত্যাশার পুনর্ব্যক্তি করেছে।

জঞ্জাল সরানো

বিগত ১৬ বছরের অপশাসনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাওয়া এবং দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হওয়া। আগামী সরকারের বড় কাজ হবে এসব জঞ্জাল অপসারণ ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান নির্মাণ।

উপদেষ্টা পরিষদ কেমন হওয়া উচিত

মেয়াদ: তত্ত্বাবধায়ক উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্ব নির্বাচন করা। তবে সংস্কার ছাড়া শুধু নির্বাচন অর্থবহ হবে না। প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তত দুই বছর সময় দেওয়া উচিত, তবে মেয়াদ সংবিধানে উল্লিখিত পাঁচ বছর মেয়াদের বেশি হবে না।

গঠন: ব্যয় সাশ্রয় ও কাজের পরিধি বিবেচনায় প্রধান উপদেষ্টাসহ ২০ জনের একটি পরিষদ গঠন করা উচিত। সততা, মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সমন্বয় থাকা উচিত। নারী, তরুণ ও অনগ্রসর জনগণের প্রতিনিধিত্ব প্রয়োজন।

ছাত্রদের ভূমিকা

ছাত্রদের শিক্ষাঙ্গনে ফিরে গিয়ে ছাত্র সংসদ পরিচালনা করে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গ্রহণের প্রস্তুতি নিতে হবে। নতুন সরকার সঠিক পথে থাকলে তাদের সহায়তা দিতে হবে এবং পথভ্রষ্ট হলে হুঁশিয়ারি দিতে হবে।

আশু করণীয়

১. আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ২. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিদ্যমান রাজনৈতিক ধারাসমূহ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ৩. ছাত্রদের ৯ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। ৪. কাঠামোগত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও বিচারব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। ৫. যোগ্যতার ভিত্তিতে নতুন নিয়োগ দিতে হবে। ৬. অর্থনীতির চাকা দ্রুত সচল করতে হবে ও দরিদ্র জনগণের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে হবে।

আমরা কেউই চাই না সাম্প্রতিক আন্দোলনে শহীদদের আত্মদান বৃথা যাক। জেনারেশন জেড-সূচিত বিপ্লব সফল হোক।


More News Of This Category
https://slotbet.online/