• বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০১:৫৬ অপরাহ্ন

নতুন নির্বাচন কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করল জাতীয় নাগরিক কমিটি

Reporter Name / ৪৭ Time View
Update : রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের তৈরি আইন অনুযায়ী গঠিত নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রত্যাখ্যান করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সংগঠনটি দাবি করেছে, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাবে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন গঠনে বাধ্য হয়েছে, যা গণ–অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল।’’

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের আগে ইসি গঠনের প্রতিবাদে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সংগঠনটি তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করে।

এদিকে আজই শপথ নিয়েছেন নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চারজন কমিশনার। গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং বাকিদের নিয়োগ দেন। এই নিয়োগ ও শপথকে বিরোধিতা করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি, যাদের মতে, এটি আওয়ামী লীগ সরকারের প্রণীত আইনের অধীনে হচ্ছে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘‘২০২২ সালে আওয়ামী লীগ সরকার একটি নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের আইন প্রণয়ন করেছিল, যা ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার আইন-২০২২’ নামে পরিচিত। আওয়ামী লীগ সরকারের সেই আইন তখন বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল প্রত্যাখ্যান করেছিল। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও সেই আইনের আওতায় নির্বাচন কমিশন গঠনের সার্চ কমিটি তৈরি করেছে। অথচ গত জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ওই আইন বাতিল করাটাই যুক্তিযুক্ত ছিল।’’

তারা আরও দাবি করেছে, সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে, যার কাজ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে সুপারিশ পেশ করা। কমিটির প্রধান বদিউল আলম মজুমদার এই কাজ শুরু করেছেন প্রায় দুই মাস আগে। তবে তাদের প্রথম কাজই ছিল নির্বাচন কমিশন গঠনের পদ্ধতি নির্ধারণ, অথচ এর আগেই সরকার সার্চ কমিটি গঠন করে ফেলেছে।

জাতীয় নাগরিক কমিটি আরো জানিয়েছে, সংস্কার কমিশন ইতিমধ্যে নতুন একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছে, যা এখন সরকারের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তবে সার্চ কমিটি গঠন করায় এটি যে এখন আর আগাতে পারে না, সেই সন্দেহও দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে সংস্কার কমিশনের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।

জাতীয় নাগরিক কমিটি সরকারের এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং অভিযোগ করেছে যে, এই সরকার জনগণের অভিপ্রায় যথাযথভাবে প্রতিফলিত করতে পারছে না। তারা আরও বলেছে, ‘‘আজও ফ্যাসিবাদী সরকারের রাষ্ট্রপতি বহাল রয়েছেন, যিনি আওয়ামী লীগ সরকারের হয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। সেই রাষ্ট্রপতির অধীনে কোনো নিয়োগ বৈধ হতে পারে না।’’ কমিটি অবিলম্বে এই কমিশন ও আইনের সংস্কার করে একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে।

সংগঠনটি জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের কাছে নতি স্বীকার করে সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করতে বাধ্য হয়েছে এবং এটি গণ–অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। তারা দাবি করেছে, ‘‘এই সরকারের উদ্দেশ্য অবশ্যই জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, আর নির্বাচন কমিশনের কাঠামো পরিবর্তন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।’’

তারা আরও উল্লেখ করেছে, ‘‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি ছাত্র-জনতার দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত, তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নয়, বরং জনগণের আস্থা ও প্রত্যাশার প্রতি দায়বদ্ধ।’’

এছাড়া, জাতীয় নাগরিক কমিটি দাবি করেছে যে, জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে না পারলে সরকারের বৈধতাও প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং নির্বাচনের আয়োজন তড়িঘড়ি করে করা উচিত হবে না। তারা সরকারের কাছে গণ–অভ্যুত্থানের চেতনার প্রতি সন্মান রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।


More News Of This Category
https://slotbet.online/