• বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৮:৫০ অপরাহ্ন

প্রযোজকদের কাছে দিলদারের পাওনা লাখ লাখ টাকা

ডেস্ক রিপোর্ট / ৫৪ Time View
Update : রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪

তাঁর অভিনয়ে ছিল অনন্যতা। কমেডি অভিনয়ের ক্ষেত্রে একেবারেই স্বতন্ত্র ছিলেন তিনি। সিনেমা হলে দর্শকদের মনোরঞ্জন করতে পারতেন সহজেই। টেলিভিশনের পর্দায়ও তাঁর উপস্থিতি সব সময় মুগ্ধ করত। গতকাল ১৩ জুলাই ছিল এই গুণী অভিনেতা দিলদারের মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৩ সালের এই দিনে তিনি মারা যান।

দিলদার মাত্র ২০ বছর বয়সে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। এরপর থেকে নিজের অভিনয় প্রতিভা দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে জায়গা করে নেন। বিশেষ করে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। একসময় তাঁর জন্য বিশেষ গল্প লেখা হতো। দিলদার ছিলেন প্রযোজকদের আস্থার প্রতীক, যিনি মানে হিট ছবি। তাঁর কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। দিলদারের মৃত্যুর পর তাঁর স্থান এখনো শূন্য রয়ে গেছে।

পরিচালক মালেক আফসারী এক ভিডিওতে বলেন, ‘উত্তরায় শুটিং চলছিল। শুটিং সেটে দুই সুপারস্টার বসেছিলেন। ভক্তরা তাঁদের ঘিরে ধরেছিলেন অটোগ্রাফের জন্য। এমন সময় দিলদার আসেন, এবং ভক্তরা হুমড়ি খেয়ে দিলদারের কাছে চলে যান।’ ৩৮ বছরের ক্যারিয়ারে দিলদার প্রায় পাঁচ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন।

প্রয়াত দিলদারের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মাসুমা আক্তার রুমা দন্তচিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘প্রথম দুই বছর বাবাকে স্মরণ করা হতো। এখন আমরা পারিবারিকভাবে স্মরণ করি। চলচ্চিত্র থেকে যাঁরা বাবাকে স্মরণ করার কথা, তাঁরা দিনটি ভুলে যান। বাবা তাঁর প্রিয় মানুষদের কাছে এত তাড়াতাড়ি মারা যাবেন, ভাবিনি।’ জনপ্রিয় অভিনেতা দিলদারের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের পাশ থেকে আস্থার দেয়াল সরে যায়। পরিচিত মানুষগুলো অচেনা হয়ে যান। জন্ম বা মৃত্যু দিনে সেভাবে তাঁকে কেউ স্মরণ করেন না। তাঁদের সংকটের মুহূর্তেও পাশে কাউকে পাননি। জানা যায়, এই অভিনেতা মারা যাওয়ার সময় বিভিন্ন প্রযোজকের কাছে প্রায় ৮০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক পেতেন। পরিবারের দুঃসময়ে এই টাকা তাঁরা পাননি।

মাসুমা আক্তার রুমা বলেন, ‘বাবা কখনো কারও কাছে এক-দুবারের বেশি টাকা চাইতেন না। তাই বেশির ভাগ সময় তিনি অগ্রিম পারিশ্রমিক নিতেন। কিন্তু অনেক সময় পরিচিত প্রযোজকদের কাছে অগ্রিম টাকা চাইতেন না। এভাবে বাবার পাওনা ৮০ লাখ টাকা জমা হয়। প্রযোজকদের কাছ থেকে বাবার পাওয়া ৩৫ লাখ টাকার চেক বাসায় ছিল, সেই টাকাও পাইনি।’ তিনি সুপারহিট ‘আবদুল্লাহ’ ছবির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ছবির প্রযোজকের সঙ্গে বাবার চুক্তি হয়েছিল, ছবিটি হিট হলে তাঁরা ১০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক দেবেন, ব্যর্থ হলে কিছুই পাবেন না। কিন্তু ছবিটি হিট হলেও পারিশ্রমিক পাননি।’ এখন এসব নিয়ে তাঁদের আর কোনো দাবিদাওয়া নেই। সবার কাছে শুধু দোয়া চান।

ছোট মেয়ে জিনিয়া আফরোজ বলেন, ‘চলচ্চিত্রের জন্য বাবা তাঁর পুরো জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি চলচ্চিত্রের মানুষ ছিলেন। বাবার ব্যস্ততায় দিনের পর দিন তাঁকে দেখতে পেতাম না। তিনি সকালের আগেই বেরিয়ে যেতেন এবং আমরা ঘুমানোর পর ফিরে আসতেন। বাবার জনপ্রিয়তা ছিল এমন, আমরা বাইরে কোথাও গেলে ভিড় জমে যেত। ১৯৯৫ সালে মৌচাক মার্কেটে বোনের বিয়ের কেনাকাটা করতে গেলে প্রচুর ভিড় হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত দোকানের গেটে তালা মেরে দিতে হয়। নিরাপত্তারক্ষী ও পুলিশ এসে আমাদের গাড়িতে তুলে দেয়। বাবাকে নিয়ে গাড়ি বের করতেও কষ্ট হয়েছিল। এসব অনুভূতি আমাদের আনন্দ দেয়। তাই মনে হয় বাবার উচিত বেঁচে থাকা, তিনি দর্শকদের হৃদয়ে ঠিকই আছেন।’

দিলদারের মা-বাবা তাঁকে দেলোয়ার হোসেন নামে ডাকতেন। কিন্তু চলচ্চিত্রে আসার আগে নাম পরিবর্তন করে দিলদার হোসেন রাখেন। নতুন নামেই তিনি দর্শকের হৃদয়ে ঠাঁই করে নেন।


More News Of This Category
https://slotbet.online/