৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার লিখিত অংশে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই বিষয়টির পরীক্ষায় মোট ১০০ নম্বর থাকে এবং এতে মোট তিন ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। অন্য বিষয়ের তুলনায় এই বিষয়টি উত্তর দেওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি সময় পাওয়া যায়, তাই সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে এই পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জন সম্ভব।
এই বিষয়ের পরীক্ষার কাঠামোতে তিনটি ধরনের প্রশ্ন থাকে: ৪ নম্বরের ১০টি জ্ঞানমূলক প্রশ্ন, ১৫ নম্বরের ৩টি বর্ণনামূলক প্রশ্ন, এবং ১৫ নম্বরের একটি সমস্যা সমাধানমূলক প্রশ্ন। আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোর তুলনায় এখন আর বিকল্প প্রশ্ন নেই, তাই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, যা পরীক্ষাকে কিছুটা কঠিন করে তুলেছে।
সময় ভাগাভাগি ও প্রস্তুতির কৌশল
এই ১৮০ মিনিটের পরীক্ষায় ৮ মিনিট বাদ দিলে ১৭২ মিনিট সময় পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৪ নম্বরের প্রশ্নে ৭ মিনিট করে এবং ১৫ নম্বরের প্রশ্নে ২৫.৫ মিনিট সময় নির্ধারণ করা যেতে পারে। এই সময়ের মধ্যে যতটুকু সম্ভব, উত্তর লেখা উচিত, কারণ লেখার পরিমাণ সময়ের সাথে সঙ্গতি রাখতে হবে।
বিগত বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নের বিশ্লেষণ
বিগত ৩৫তম থেকে ৪৫তম বিসিএস পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কিছু বিশেষ অধ্যায় থেকে বেশি প্রশ্ন এসেছিল। এদের মধ্যে ছিলঃ
এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে বোঝা যায় যে, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির পরিচিতি এবং বৈশ্বিক পরিবেশ অধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, তাই এগুলো ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
বর্ণনামূলক প্রশ্নের প্রস্তুতি
বর্ণনামূলক প্রশ্নের মধ্যে জাতিসংঘ, প্রধান শক্তিগুলোর বৈদেশিক সম্পর্ক, বিশ্বের প্রধান সমস্যা ও দ্বন্দ্ব, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি—এইসব বিষয় থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা বেশি। এই ধরনের প্রশ্নে উত্তর দেওয়ার জন্য বইয়ের পাশাপাশি দৈনিক পত্রিকা ও অন্যান্য সম্পাদকীয় পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পত্রিকার কলামগুলোতে যে গভীরতা ও বিশ্লেষণ থাকে, তা পরীক্ষার উত্তর তৈরির সময় সাহায্য করবে।
নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তরের কৌশল
৪ নম্বরের প্রশ্নের উত্তরে প্রথমে সংজ্ঞা, প্রামাণ্য সংজ্ঞা অথবা মনীষীদের উক্তি দিয়ে শুরু করুন। এরপর একটি বা একাধিক উদাহরণ দিন এবং প্রয়োজন হলে ছোট চিত্র বা ডায়াগ্রামও ব্যবহার করতে পারেন।
বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তরে অবশ্যই ম্যাপ আঁকার অভ্যাস করুন। বিভিন্ন অঞ্চলের ম্যাপ যেমন দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ চীন সাগর, আরব উপদ্বীপ, স্ট্রিং অব পার্লস (মুক্তার মালা থিওরি), ফিলিস্তিন-ইসরায়েল, বাংলাদেশ-মিয়ানমার ইত্যাদি, এসব চর্চা করতে হবে।
এছাড়া, বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তরে ভূমিকা, সংজ্ঞা, পটভূমি, সাম্প্রতিক ঘটনা, ফলাফল, এবং উপসংহার—এইসব বিভাগে প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। উত্তর যতটুকু সম্ভব তথ্যপূর্ণ ও বিশ্লেষণমূলক হতে হবে।
সমস্যা সমাধানমূলক প্রশ্নের কৌশল
সমস্যা সমাধানমূলক প্রশ্নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে—ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সমস্যা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, ন্যাটো সম্প্রসারণ ইত্যাদি। এ ধরনের প্রশ্নে উত্তর লেখার সময়, ফরম্যাট নিয়ে চিন্তা না করে, মূলত লেখার মান ও বিষয়বস্তুর ওপর বেশি গুরুত্ব দিন। শিরোনাম, ভূমিকা, পটভূমি, প্রামাণ্য সংজ্ঞা, উক্তি, রেফারেন্স, সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ, করণীয়, উপসংহার—এইসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে উত্তর লেখা যেতে পারে।
উপসংহার
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির এই পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্য নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা পড়া, ম্যাপ আঁকার চর্চা, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর গভীর প্রস্তুতি গ্রহণ এবং লেখার দক্ষতা উন্নয়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে সময় ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সময়ের মধ্যে সঠিক এবং বিশ্লেষণমূলক উত্তর দেওয়ার দক্ষতা অর্জন করলেই এই বিষয়ে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।
https://slotbet.online/