• বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৩:২৬ অপরাহ্ন

নিরাপত্তাহীনতায় আরও একটি প্রাণের বলি: প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার শিকার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

Reporter Name / ৩৭ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক দুর্ঘটনা আর নিরাপত্তাহীনতার কারণে আবারও প্রাণ হারাল এক শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসের পরিচিত রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় গত মঙ্গলবার রাতে আফসানা করিম (রাচি) নামে এক শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দেয় একটি দ্রুতগামী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর গুরুতর আহত হন তিনি। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা মাত্র এক মাস আগে ক্যাম্পাসে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর অকাল মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে, এবং শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা সবাই এই ঘটনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ, যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তারা বলছেন, ক্যাম্পাসে যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলির চলাচল রয়েছে, তাতে কোনো নিয়ন্ত্রণ বা শৃঙ্খলা নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবে, অদক্ষ চালকরা ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশ করছে, যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া, ক্যাম্পাসের রাস্তার অনেক জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকা এবং সেগুলোর অনুপযুক্ত পরিচালনা এই ধরনের ঘটনার জন্য আরও বেশি দায়ী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখানে রিকশাচালকদের অধিকাংশই অদক্ষ এবং তাদের পেশাদারি দক্ষতা যাচাই করার কোনো সঠিক ব্যবস্থা নেই। এর পাশাপাশি, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক, বিশেষ করে মূল ফটকগুলোতে যানবাহন প্রবেশের কোনো কার্যকর নিয়ন্ত্রণ নেই। এর ফলে দুর্ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনই শিক্ষার্থীরা প্রায়ই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

ক্যাম্পাসে নিবন্ধিত ৩১০টি ব্যাটারিচালিত রিকশার অধিকাংশ চালকই পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া এখানে কাজ করছেন। আর কয়েকটি রিকশাচালক বাইরে থেকে এসে ক্যাম্পাসে অবৈধভাবে রিকশা চালাচ্ছেন, এবং তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখা একাধিকবার ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং সীমানাপ্রাচীরের উচ্চতা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব দিলেও প্রশাসন থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন যে, তাদের সুপারিশ এবং অভিযোগগুলো উপেক্ষিত হয়েছে, যার ফলে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠেছে।

অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন কিছু উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং সীমানাপ্রাচীরের উচ্চতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে, অটোরিকশার চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপদ চলাচলের জন্য শাটল বাস চালু করার বিষয়েও আলোচনা চলছে।

এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা আরও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন। আফসানা করিমের সহপাঠীরা জানিয়েছেন, তিনি ছিলেন একজন পরোপকারী এবং হাস্যোজ্জ্বল মেয়ে, যার বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার পর বিদেশে পড়াশোনার স্বপ্ন ছিল। এখন আর তাঁর সেই স্বপ্ন পূর্ণ হবে না, এই ভাবনা তাঁদের সকলকে দুঃখ ভারাক্রান্ত করেছে।

এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি শিক্ষার্থীদের আহ্বান রইল।


More News Of This Category
https://slotbet.online/