• বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০১:৩৬ অপরাহ্ন

প্রভাবশালীদের সুপারিশে স্থলবন্দরগুলোতে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

Reporter Name / ৫৮ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪

প্রাক্তন ক্ষমতাসীন সরকারের আমলে প্রভাবশালী মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের তদবিরে যে আটটি স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার ভবিষ্যৎ বর্তমানে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এসব স্থলবন্দর নির্মাণে সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় করা হলেও অনেক জায়গায় সেগুলোর কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি, আবার যেগুলো চালু হয়েছে, সেগুলোও অপ্রতুল বাণিজ্য কার্যক্রমের কারণে লাভজনক হতে পারেনি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাতে এসব স্থলবন্দর রাখা হবে নাকি বাতিল করা হবে, তা নির্ধারণ করা হবে।

যেসব স্থলবন্দর পর্যালোচনার আওতায় রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে শেরপুরের নাকুগাঁও, ময়মনসিংহের গোবরাকূরা-কড়ইতলি, জামালপুলের ধানুয়াকামালপুর, হবিগঞ্জের বাল্লা, দিনাজপুরের বিরল, নীলফামারীর চিলাহাটি, চুয়াডাঙ্গার দৌলতগঞ্জ ও রাঙামাটির তেগামুখ। এসব বন্দরের মধ্যে বেশিরভাগে কার্যক্রম নেই, আর যেগুলোর কার্যক্রম আছে, তা আদৌ লাভজনক নয়।

বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ২৪টি স্থলবন্দর রয়েছে, তবে এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যক্রম চালু আছে মাত্র ১২টি। বাকি বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। স্থলবন্দরগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সহজ করা, কিন্তু বেশিরভাগ বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন ঠিকমতো না হওয়ায় সেগুলোর কার্যক্রমের ফলস্বরূপ কোনো উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য হয়নি।

সম্প্রতি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা এক মাসের মধ্যে এসব স্থলবন্দর পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রতিবেদনে বলা হবে কোন বন্দরের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা যেতে পারে এবং কোনটি বন্ধ করা উচিত।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, কোনো স্থলবন্দর চালু করার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া উচিত নয়। এর বদলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, যেখানে বাণিজ্যের সম্ভাবনা, বিনিয়োগের পরিমাণ এবং সাধারণ কার্যক্ষমতা বিবেচনায় নেয়া হবে।

অফিসাররা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ স্থলবন্দর প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের তদবিরের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যাতে তারা নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় সুবিধা পেতে পারেন। এসব বন্দরের মধ্যে শেরপুরের নাকুগাঁও, ময়মনসিংহের গোবরাকূরা-কড়ইতলি, জামালপুরের ধানুয়াকামালপুর এবং হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দর উল্লেখযোগ্য।

২০১৫ সালে শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দর চালু করা হয়েছিল সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর সুপারিশে, কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে এটি খুবই অপ্রতুল। একইভাবে, ময়মনসিংহের গোবরাকূরা-কড়ইতলি স্থলবন্দর ২০২২ সালে উদ্বোধন হলেও এখনো কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। জামালপুরের ধানুয়াকামালপুর স্থলবন্দরও ২০২৩ সালে উদ্বোধন হলেও এটি খুবই সীমিত পরিসরে কাজ করছে।

এছাড়া, দিনাজপুরের বিরল, চিলাহাটি, চুয়াডাঙ্গার দৌলতগঞ্জ এবং রাঙামাটির তেগামুখ স্থলবন্দরগুলি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে স্থাপিত হয়েছে, তবে এগুলোর কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি।

যেহেতু এসব স্থলবন্দরগুলোর কার্যক্রম তেমন লাভজনক নয় এবং এগুলোর অবকাঠামো তৈরির জন্য সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে, তাই বর্তমানে নতুন সরকার পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। এই পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কোনগুলো রাখা উচিত এবং কোনগুলো বাতিল করা উচিত, যাতে দেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রম আরও কার্যকরভাবে পরিচালিত হতে পারে।


More News Of This Category
https://slotbet.online/