• বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৮:১১ অপরাহ্ন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টির নতুন পথ

Reporter Name / ৩৭ Time View
Update : বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছে এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী অবস্থান নিচ্ছে। বিশেষ করে, সরকারের নতুন উপদেষ্টা নিয়োগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এই আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি। গত কিছুদিনে, বিভিন্ন ছাত্রনেতা এবং নাগরিক সংগঠন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁদের মতামত জানিয়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে, যা সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টির একটি উদ্যোগ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যে সংগঠনটি ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকালে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সামনে এসেছিল, তাদের কার্যক্রম এখন আরও বিস্তৃত এবং সংগঠন হিসেবে শক্তিশালী হয়েছে। আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা জানান, তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারের ভুল পদক্ষেপ প্রতিরোধ করা এবং জনগণের স্বার্থে তারা সরকারের প্রতি চাপ তৈরি করতে চায়। ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মতে, সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টি জনস্বার্থের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সরকারের এসব পদক্ষেপ জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হতে পারে।

বিশেষত, সরকার যখন ১০ সেপ্টেম্বর উপদেষ্টা পরিষদে নতুন সদস্য নিয়োগ করে, তখন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অভিযোগ করে যে, এই পদক্ষেপে তারা জনগণের মতামত বা সমাজের বিশেষ অংশগুলোর পরামর্শকে গুরুত্ব দেয়নি। এক্ষেত্রে, তাদের মতে, সরকার বিরোধী শক্তির প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের নিয়োগের ফলে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। তাঁদের দাবি, সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

এছাড়া, জাতীয় নাগরিক কমিটিও সরকারের নানান সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, সরকার নানা ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে জনগণের মতামত এবং অংশীদারিত্বকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাদের অভিযোগ, বিশেষত উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার যে পদ্ধতি অনুসরণ করছে তা জনস্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ বিষয়টি নিয়ে নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন মন্তব্য করেছেন, “উপদেষ্টা নিয়োগের পদ্ধতি জনবান্ধব নয়। এর মাধ্যমে জনগণের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে, যা বর্তমান সরকারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা স্পষ্ট করেছেন যে, তারা কোনোভাবেই সরকারের অংশ হিসেবে কাজ করছেন না। তাঁরা নিজেদের একধরনের ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসেবে দেখছেন, যারা সরকারের ভুল পদক্ষেপগুলো আটকাতে সহায়তা করবে। তবে, আন্দোলনের কিছু নেতার দাবি, ছাত্র-জনতার মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারণে সরকারের প্রতি কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, “অন্ধভাবে সরকারের পক্ষ সমর্থন করা আমাদের জন্য সঠিক হবে না, কারণ আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা।”

এদিকে, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগঠন এবং নাগরিক সমাজও সরকারকে তাদের পদক্ষেপ সম্পর্কে আরও স্বচ্ছ ও তথ্যভিত্তিক মনোভাব গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে। তারা মনে করেন, যদি সরকার তাদের নীতিমালা ও কার্যক্রমের বিস্তারিত জনসাধারণের কাছে উপস্থাপন না করে, তাহলে তা সরকারের প্রতি আস্থাহীনতা সৃষ্টি করবে এবং এই আস্থাহীনতা দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি নিজেদের কাজকে স্বতন্ত্র ও জনগণের পক্ষে অবিচল রাখতে চাইছে, যাতে ভবিষ্যতে তারা সত্যিকার অর্থে দেশের উন্নয়ন ও রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, তাদের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, কীভাবে সরকারকে নিজেদের দাবিগুলো সঠিকভাবে তুলে ধরবে এবং দেশের মানুষকে পাশে নিয়ে গণতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করবে।

এখনো দেশের বেশিরভাগ জনগণের কাছে ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছে। তাদের অনেকেই এখনও মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের প্রতি সমর্থন বা বিরোধিতা যে কোনো একপক্ষীয় মনোভাব দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য উপকারী হবে না। তাই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে তাদের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে জনগণের আস্থার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা এবং সরকারের প্রতি চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে কার্যকর পরিবর্তন আনা।

শেষ কথা
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও চ্যালেঞ্জের মধ্যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি সরকারের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেও, তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজের সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করা। যদি তারা সত্যিকারভাবে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে কাজ করতে সক্ষম হয়, তবে তাদের এই চাপ প্রয়োগের কৌশল দেশের রাজনীতি ও প্রশাসনের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।


More News Of This Category
https://slotbet.online/