দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল), চট্টগ্রামে ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠান বছরে ১৫ লাখ টন তেল পরিশোধন করতে সক্ষম। নতুন প্রকল্পের আওতায় ৩০ লাখ টন ক্ষমতার আরেকটি ইউনিট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল-২’ নামের প্রকল্পটি ২০১২ সালে শুরু হয় এবং এর বাস্তবায়ন হলে বছরে প্রায় ২৪ কোটি ডলার সাশ্রয় হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
এস আলম গ্রুপের সঙ্গে এই প্রকল্পে অংশীদারিত্বের বিষয়ে বিপিসি এবং ইস্টার্ন রিফাইনারির কর্মকর্তারা জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে এস আলম গ্রুপকে যুক্ত করা হয়েছিল। গ্রুপটি এখানে ৫১ শতাংশ মালিকানা দাবি করেছিল, কিন্তু বিপিসি ৬০ শতাংশ মালিকানা সরকারের কাছে রাখার পক্ষে ছিল। চুক্তির চূড়ান্ত প্রস্তাব করার আগে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো খসড়ার পর এই চুক্তির বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হয়নি বলে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন।
জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এস আলম গ্রুপের অংশীদারিত্ব বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন করে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল আলম জানিয়েছেন, নতুন পরিশোধনাগারটি সরকার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করবে এবং এর জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হবে।
এস আলম গ্রুপের প্রকল্পে ৫১ শতাংশ মালিকানা দাবি করার বিষয়টি বর্তমান সরকারের নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না, বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের পর এস আলম গ্রুপের সাথে চুক্তি না করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। নতুন প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এখন পুনর্বিন্যাস করা হবে।
জ্বালানি তেল পরিশোধনের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাবিত এই প্রকল্পটি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়নে সহায়তা করবে। বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেল পরিশোধনের সীমিত ক্ষমতার কারণে ডিজেল আমদানির উপর নির্ভরতা বাড়ছে, যা সরকারের জন্য অতিরিক্ত খরচের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন পরিশোধনাগার নির্মাণ হলে ডিজেলের চাহিদা পূরণ সহজ হবে এবং পেট্রল রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর ফলে সরকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে পারবে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।