• বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০২:০১ অপরাহ্ন

সম্পদের অহংকারের পরিণতি: কারুনের কাহিনি

Reporter Name / ৫১ Time View
Update : রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৪

প্রাচীন যুগে, কারুন ছিলেন হজরত মুসা (আ.)-এর সম্প্রদায়ের সদস্য। আল্লাহ তাঁকে অতিশয় ধন-সম্পদ প্রদান করেছিলেন। তবে, এই বিপুল সম্পদ তাঁর মনকে মগ্ন করে দেয় এবং তিনি তার সহপাঠীদের ওপর অত্যাচার চালাতে শুরু করেন। কারুন তার সম্পদের মোহে এতটাই হারিয়ে গিয়েছিলেন যে, মানুষের প্রতি দয়া করার বদলে তিনি তাদের ওপর জুলুম করতে থাকেন। নবী মুসা (আ.) তাঁকে আল্লাহর ভয় করার, আখিরাতের কথা স্মরণ করার এবং মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করার পরামর্শ দেন। কিন্তু কারুন এসব উপদেশ মেনে নেননি।

সুরা কাসাসে কারুনের দম্ভ, অবাধ্যতা এবং তার পরিণতির কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। তাফসির তাবারিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কারুন ছিলেন মুসা (আ.)-এর চাচাতো ভাই। মুসা (আ.) বনি ইসরাইলের একটি অঞ্চলের নেতৃত্বে ছিলেন, আর কারুন ছিলেন অন্য একটি অঞ্চলের নেতা। মিসরের ফায়ুম শহরের কাছে ‘কারুন হ্রদ’ নামে একটি স্থান রয়েছে, যা বর্তমানে বিরকেত কারুন নামে পরিচিত।

কোরআনে উল্লেখ রয়েছে যে, “কারুন ছিল মুসার সম্প্রদায়ের অংশ, কিন্তু সে তাদের ওপর জুলুম করেছিল। আমি তাকে এমন এক ধন-সম্পদ দিয়েছিলাম, যার চাবিগুলো বহন করা শক্তিশালী লোকের জন্যও কষ্টকর ছিল। তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, অহংকার করো না; আল্লাহ দাম্ভিকদের পছন্দ করেন না। আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন তা দিয়ে আখিরাতের কল্যাণ সন্ধান করো এবং পৃথিবীর সুখ-সাধনাকে ত্যাগ করো না। সদয় হও, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি সদয়। পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে চেয়ো না; আল্লাহ ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।”

“কারুন বলেছিল, ‘এই সম্পদ আমি আমার জ্ঞানের জোরে অর্জন করেছি।’ কি সে জানতো না যে, আল্লাহ পূর্বে বহু শক্তিশালী এবং ধনশালী জাতিকে ধ্বংস করেছেন? অপরাধীদের তাদের অপরাধের জন্য জিজ্ঞাসা করা হবে না।”

“কারুন তার সম্প্রদায়ের সামনে জাঁকজমকপূর্ণভাবে উপস্থিত হয়েছিল। যারা পার্থিব জীবনের আকাঙ্ক্ষা করত তারা বলেছিল, ‘কারুনকে যা দেওয়া হয়েছে, আমরা যদি তা পেতাম!’ তারা মনে করেছিল, তিনি খুব ভাগ্যবান। কিন্তু যারা জ্ঞান লাভ করেছিলেন তারা বললেন, ‘তোমরা দুঃখিত হও, যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে, তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ। শুধুমাত্র ধৈর্যশীলরা এ পুরস্কার পায়।’”

“এরপর আল্লাহ কারুন ও তার প্রাসাদকে মাটির নিচে সমাহিত করে দেন। তার জন্য এমন কোনো দল ছিল না যারা আল্লাহর শাস্তির বিরুদ্ধে তাঁকে সহায়তা করতে পারত, এবং তিনি নিজেও আত্মরক্ষা করতে পারলেন না। আগের দিন যারা তার মতো হতে চেয়েছিল, তারা তখন বলল, ‘দেখো, আল্লাহ তাঁর দাসদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা জীবনের উপকরণ বৃদ্ধি করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা তা কমান। যদি আল্লাহ আমাদের প্রতি সদয় না হতেন, তবে আমাদেরকেও তিনি মাটির নিচে সমাহিত করতেন। দেখো, অবিশ্বাসীরা সফল হয় না।’”

“এ পরকাল, যা আমি নির্ধারণ করি তাদের জন্য যারা পৃথিবীতে অহংকার ও ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে চায় না। সাবধানীদের জন্য শুভ পরিণাম রয়েছে। যে সৎকর্ম করে, সে তার কর্মের চেয়ে বেশি পুরস্কার পাবে এবং যে মন্দ কর্ম করে, সে কেবল তার কর্মের অনুপাতে শাস্তি পাবে। যে কোরআনকে তোমার জন্য বিধান করেছে, তিনি নিশ্চয়ই তোমাকে তোমার দেশে ফিরিয়ে আনবেন। বলো, ‘আমার প্রতিপালক ভালো জানেন কে সৎ পথের নির্দেশ এনেছেন এবং কে পরিষ্কার বিভ্রান্তিতে আছেন।’” (সুরা কাসাস, আয়াত: ৭৬-৮২)

এই কাহিনী আমাদের শেখায় যে, সম্পদের অহংকার এবং দম্ভের পরিণতি কখনও মঙ্গলময় হতে পারে না। আল্লাহর দেওয়া সম্পদের সঠিক ব্যবহার এবং মানবতার প্রতি সদয় মনোভাব বজায় রাখা সর্বদা প্রয়োজন।


More News Of This Category
https://slotbet.online/