সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত
সুরা বাকারার ২৮৫ ও ২৮৬ নম্বর আয়াত দুটি হলো:
- আয়াত ২৮৫: “রাসুল ও বিশ্বাসীগণ যা কিছু তাঁর প্রতিপালক থেকে অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস করে, সকলেই বিশ্বাস করে আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, কিতাবগুলো ও রসুলদের ওপর। তারা বলে, ‘আমরা তাঁর রসুলদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না।’ আর তারা বলে, ‘আমরা শুনি ও মানি। হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা তোমার নিকট ক্ষমা চাই এবং তোমার কাছে আমরা ফিরে যাব।”
- আয়াত ২৮৬: “আল্লাহ কাউকেই তার সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্বভার দেন না। প্রত্যেকটি ভালো ও মন্দ কর্ম তার নিজের। (তোমরা প্রার্থনা করো) ‘হে আমাদের প্রতিপালক, যদি আমরা ভুলে যাই বা ভুল করি তবে তুমি আমাদেরকে অপরাধী কোরো না। হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের পূর্ববর্তীদের যে ভারী দায়িত্ব দিয়েছিলে আমাদের ওপর তেমন দায়িত্ব দিয়ো না। হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি এমন ভার আমাদের ওপর দিয়ো না যা বইবার শক্তি আমাদের নেই। আর আমাদের পাপ মোচন করো, আমাদের ক্ষমা করো এবং আমাদের ওপর দয়া করো। তুমি আমাদের অভিভাবক। অতএব অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে তুমি আমাদের জয়যুক্ত করো।’”
আয়াতগুলোর বিশেষ ফজিলত
রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার এ আয়াত দুটি সম্পর্কে বলেন যে, “যে ব্যক্তি রাতে এ দুটি আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য এটাই যথেষ্ট।” (সহিহ্ মুসলিম)। এছাড়া, রাসুল (সা.) আরও উল্লেখ করেছেন যে, সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত আল্লাহর আরশের নিচের ভান্ডার থেকে দান করা হয়েছে এবং এই আয়াতগুলো রহমত, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় এবং দীন ও দুনিয়ার কল্যাণের দোয়া। (মিশকাতুল মাসাবিহ: ২১৭৩)
মিরাজের রাতে অবতরণ
মুসলিম বিশ্বাস অনুযায়ী, এই আয়াত দুটি রাসুল (সা.)-কে মিরাজের রাতে আসমানে দান করা হয়েছিল এবং এর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে একটি বিশেষ উপহার দেয়া হয়েছিল যা তাদের জীবনে বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা করে এবং জান্নাতের পথ সুগম করে।
ধর্মীয় শিক্ষা এবং সুপারিশ
হজরত আলী (রা.) এবং অন্যান্য সাহাবিরা এ আয়াতগুলোকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন এবং এসব আয়াতের তিলাওয়াতের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন যে, সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যাওয়ার সময় রাসুল (সা.) কে তিনটি বিশেষ দান দেয়া হয়েছিল, যার মধ্যে সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত অন্যতম।
এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, সুরা বাকারার এই শেষ দুটি আয়াত কেবলমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিকোণেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং আধ্যাত্মিক শান্তি এবং ঈমানি শক্তি বৃদ্ধিতেও অপরিসীম ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত এই আয়াতগুলো পাঠ করে আমরা আল্লাহর রহমত, ক্ষমা ও নৈকট্য লাভ করতে পারি এবং আমাদের জীবনকে আরো সমৃদ্ধ এবং নিরাপদ করে তুলতে সক্ষম হতে পারি।