• বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৮:১৯ অপরাহ্ন

ব্যাংক দখলের পদ্ধতি: আখতারুজ্জামান চৌধুরী বনাম এস আলমের কাহিনি

Reporter Name / ৫১ Time View
Update : সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪

বাংলাদেশে ব্যাংক দখলের পদ্ধতির ইতিহাস বেশ আকর্ষণীয় এবং বিভিন্ন ধরনের কৌশল নিয়েই চলে এসেছে। দুইটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল আখতারুজ্জামান চৌধুরী ও এস আলমের ব্যাংক দখলের কাহিনি। তাদের পদ্ধতির মধ্যে প্রথাগত এবং আধুনিক পন্থার একটি বড় পার্থক্য দেখা যায়।

১৯৯৯ সালের ২৬ আগস্ট, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা অস্ত্র হাতে নিয়ে ইউসিবিএল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালান। এই ঘটনার ফলে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে জোরপূর্বক দখল করে নিয়ে, পরিচালকদের পদত্যাগে বাধ্য করেন। ব্যাংকের চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ চৌধুরীকে বেদম মারধর করে বিবস্ত্র করা হয়। ওই ঘটনায় পুলিশের উপস্থিতি সত্ত্বেও কোনো কার্যকর সহায়তা পাওয়া যায়নি।

আখতারুজ্জামান চৌধুরী, যে নিজেও ২২০ কোটি টাকা ঋণখেলাপি ছিলেন, এই হামলার মাধ্যমে ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে বসে যান। ব্যাংকের উপর তার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি অস্ত্রের ব্যবহার করেন এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হন। যদিও এই ঘটনার পর আখতারুজ্জামান চৌধুরী ২০০৯ সালে পুনরায় ইউসিবিএলের চেয়ারম্যান হন এবং বর্তমানে ব্যাংকটি তার পরিবারের দখলে রয়েছে।

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ব্যাংকিং খাতে প্রবেশের পর একটি নতুন ধরনের ব্যাংক দখলের কৌশল চালু করেন। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তন ঘটে, যা ছিল অত্যন্ত ‘শান্তিপূর্ণ’ পদ্ধতিতে। এই দখলের জন্য সরকারের একটি বিশেষ সংস্থা সক্রিয়ভাবে তত্ত্বাবধান করেছিল এবং কিছু পরিচালকদের জোরপূর্বক নথিতে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

এস আলমের ব্যাংক দখলের পদ্ধতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি ব্যাংকের শেয়ার বাজারে কিনে, আইন অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হয়ে ব্যাংক দখল করেন। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের পর, তিনি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ সাতটি ব্যাংক দখল করেন। এই দখল প্রক্রিয়ায় এস আলমের সহায়তা পেয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা, যেমন সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী এবং নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম।

দুই ধরনের ব্যাংক দখলের পদ্ধতির মধ্যে বৈসাদৃশ্য পরিষ্কার। আখতারুজ্জামান চৌধুরীর পদ্ধতি ছিল পুরোনো, যেখানে অস্ত্র ও সহিংসতার মাধ্যমে ব্যাংক দখল করা হয়। এস আলমের পদ্ধতি আধুনিক, যেখানে আইন ও শেয়ার বাজারের মাধ্যমে ব্যাংক দখল করা হয়। এই দুই প্রকার পদ্ধতির মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল আধুনিক যুগে ব্যাংক দখল করার পদ্ধতি অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে।

এস আলমের ব্যাংক দখল করার কৌশল আর্থিক খাতে রাজনৈতিক প্রভাবের একটি বড় উদাহরণ। রাজনীতি ও অর্থনীতির মধ্যে এই গভীর সংযোগ দেশের ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা তৈরি করেছে। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া দরকার যে, অর্থনীতির সাথে রাজনীতির মিশ্রণ কখনোই দেশের জন্য ইতিবাচক নয়।

ব্যাংক দখলের পদ্ধতিতে পরিবর্তন এসেছে, তবে এর প্রভাব দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক। আখতারুজ্জামান চৌধুরী ও এস আলমের কাহিনী এই বিষয়টি স্পষ্ট করে যে, ব্যাংক দখল শুধু রাজনৈতিক সহিংসতার মাধ্যমেই নয়, আধুনিক কৌশলগুলোর মাধ্যমেও হতে পারে। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ব্যাংকিং খাতে প্রভাবিত হচ্ছে। ব্যাংক দখলের এই কাহিনীগুলি আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিয়ে আসে: অর্থনীতি ও রাজনীতির মিশ্রণ কখনোই দেশের জন্য ভালো ফল বয়ে আনে না।


More News Of This Category
https://slotbet.online/