• রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ০২:৩২ পূর্বাহ্ন

ইন্টারনেট বন্ধের প্রভাব এবং এর প্রয়োজনীয়তা: কেন পরিবর্তনের দরকার

Reporter Name / ৪১ Time View
Update : রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৪

আজকের যুগে ইন্টারনেট মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। এটি তথ্য সংগ্রহ, মতপ্রকাশ, অর্থনৈতিক কার্যক্রম, যোগাযোগ এবং বিভিন্ন সেবার জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ২০১২ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচআরসি এক রেজল্যুশনে ঘোষণা করেছে যে, অনলাইন পরিসরে মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো, যেমন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সুরক্ষিত রাখতে হবে। ২০১৬ সালে, ইউএনএইচআরসি ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধা দেয়াকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০২০ সালে অনুরাধা ভাসিন বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া মামলায় ইন্টারনেট বন্ধের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতাকে সীমিত করে দিয়েছেন। রায়ে উল্লেখ করা হয় যে, মতপ্রকাশ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার সাংবিধানিক অধিকার। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ইন্টারনেট বন্ধ করা হলেও তা হতে হবে যথাযথ আনুপাতিকতা ও প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে এবং একে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেট বন্ধ করার সিদ্ধান্তের ফলে তা মানবাধিকার এবং ইন্টারনেটের অপরিহার্যতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। বর্তমান সরকারের সময়ে ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্তগুলি প্রায়শই অস্বচ্ছ ছিল এবং এর যৌক্তিকতা নিয়ে কোনো জবাবদিহি করা হয়নি। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এই বন্ধের ফলে বিরাট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ায় বিশাল আকারের ক্ষতির মুখে পড়েছেন ফ্রিল্যান্সাররা, অনলাইন ব্যবসায়ীরা এবং সাধারণ জনগণ। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় প্রচুর জরুরি সেবা ব্যাহত হয়, অর্থনৈতিক লেনদেন বন্ধ হয়ে যায় এবং বিভিন্ন খাতের ক্ষতি হয়।

ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের কাজ সম্পাদন করতে না পেরে আর্থিক ক্ষতির শিকার হন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ, কাজের আদান-প্রদান এবং অন্যান্য কার্যক্রমের অভাবে অনেক ফ্রিল্যান্সারদের আয় হ্রাস পায়। অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা যেমন ই-কমার্স এবং এফ-কমার্সও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

তাছাড়া, বন্দর কার্যক্রম, ব্যাংকিং লেনদেন এবং রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হয়, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।

এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য, ইন্টারনেট বন্ধের সংস্কৃতি থেকে সরে আসা জরুরি। দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহারের উপর নির্ভরশীলতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং একে মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। তাই, টেলিযোগাযোগ আইন ও অন্যান্য নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা উচিত।

বিক্ষোভ বা আন্দোলন দমনের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করার মতো পদ্ধতি এখন আর গ্রহণযোগ্য নয়। উন্নত প্রযুক্তি ও সামাজিক সচেতনতার এই যুগে, ইন্টারনেটের অবাধ প্রবাহ বজায় রেখে সুষ্ঠু ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত রাখা প্রয়োজন।


More News Of This Category
https://slotbet.online/