শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০১৪ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ণরূপে এককভাবে দেশ শাসন করেছেন। এই সময়কালে পুরো প্রশাসন এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং সামগ্রিক সরকারব্যবস্থা তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। এর ফলে, একাধিক অঞ্চলে স্থানীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়নি, যার ফলে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, কলাবাগানের তেঁতুলতলার খেলার মাঠের নির্মাণকাজে সৈয়দা রত্না ও তাঁর কিশোর ছেলে যখন আন্দোলন চালিয়েছিলেন, তখন তাঁদের পুরোপুরি শাসকের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করতে হয়েছিল।
এছাড়া, গত ১৫ বছরে দুর্নীতির বিস্তার দেশটির প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে গভীর প্রভাব ফেলেছে। সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, যা দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাঁধা সৃষ্টি করেছে। এ পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের সাংবিধানিক সংস্কার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি, তাই এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা এই বিশাল জনসংখ্যার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে সক্ষম নয়। প্রদেশভিত্তিক বিভাজন একটি সমাধান হতে পারে, যার মাধ্যমে প্রতিটি প্রদেশ নিজস্ব সংসদ ও আইন প্রণয়ন করতে পারবে। এছাড়া, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে এবং কিছু মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর ঢাকার বাইরে স্থানান্তরিত করতে হবে, যাতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সেবা সহজলভ্য হয়।
প্রেসিডেন্ট শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে, সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি আমার বিশ্বাস রয়েছে। এই ব্যবস্থায় সরকারের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয় সহজতর হয় এবং মন্ত্রিপরিষদ আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকে। রাষ্ট্রপতি শাসনে, অনেক সময় রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারেন এবং আইনসভার সাথে মতবিরোধ দেখা দিতে পারে, যা সরকারের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।
একটি দ্ব chambers কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা ব্যবস্থায়, প্রথম ধাপে পাস হওয়া আইন যদি পরবর্তীতে সংশোধনের প্রয়োজন হয়, তবে দ্বিতীয় ধাপে তা পুনরায় আলোচনা হতে পারে। এছাড়া, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, তবে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে রাষ্ট্রপতি কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সক্ষম।
রাজনৈতিক পরিবারতন্ত্র নিয়ে আমি কোনও বিরোধী মনোভাব পোষণ করি না, তবে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে একজন ব্যক্তি কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, তা নিয়ে আইন পাস করা উচিত। একইভাবে, দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। সবার জন্য একমুখী শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং কারিগরি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা উচিত। ইংরেজি ও অন্যান্য বিদেশি ভাষা শেখার পাশাপাশি কম্পিউটার প্রযুক্তি বিষয়েও শিক্ষার গুরুত্ব বাড়ানো উচিত।
প্রশাসন ও রাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কার জরুরি। আমাদের অর্থনীতি বর্তমানে আমদানি-নির্ভর, তাই রপ্তানি খাতকে সম্প্রসারিত করা এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
মুদ্রাস্ফীতি কমানো, কৃষকদের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা এবং বেকারত্ব দূর করার জন্য কর্মসংস্থান বাড়ানো প্রয়োজন। এভাবে, বাংলাদেশ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত হতে পারবে।