চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় তৃতীয় সন্তান মেয়ে হওয়ায় সদ্যোজাত কন্যাশিশুকে বিক্রি করে দেওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় জড়িত নবজাতকের বাবা, যিনি পেশায় একজন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক। ঘটনার পর তিনি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন।
২৯ জুন সকালে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগর ইউনিয়নের একটি বেসরকারি হাসপাতালে একটি কন্যাশিশুর জন্ম দেন ওই অটোরিকশাচালকের স্ত্রী। এটি ছিল তাদের তৃতীয় সন্তান, আগের দুটি সন্তানও মেয়ে। প্রসবের পরপরই হাসপাতালে বিল পরিশোধের অক্ষমতার কথা বলে নবজাতকের বাবা তার কন্যাশিশুটিকে ৫০,০০০ টাকায় বিক্রি করে দেন এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে।
স্থানীয় যুবক পারভেজ হোসেন বিষয়টি প্রথম নজরে আনেন। হাসপাতালের বিল পরিশোধের জন্য রক্ত দিতে গিয়ে তিনি এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে একটি ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। পোস্টটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় এবং এর ফলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
প্রথমে নবজাতকের বাবা দাবি করেন যে, তিনি হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পেরে শিশুটিকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। পরে তিনি বলেন যে, শিশুটিকে বিক্রি করা হয়নি বরং এক আত্মীয়ের কাছে সাময়িকভাবে রাখার জন্য দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. এনাম এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবজাতকের বাবা চুক্তিপত্র করে শিশুটিকে বিক্রি করার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আমার আগের দুটি সন্তান মেয়ে। এবারও মেয়ে হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে শিশুটিকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিই।”
এই ঘটনার খবর দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ফেসবুকের মাধ্যমে অনেকেই শিশুটিকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য হাসপাতালের বিল পরিশোধ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
একজন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক জানান, “হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে আমরা প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু নবজাতকের বাবা তা মানতে রাজি হননি।”
রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চন্দন কুমার চক্রবর্তী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান মেহবুব জানিয়েছেন, তারা এই ঘটনার সম্পর্কে অবগত নন এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন। তারা এই ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং কিছু ব্যক্তি নবজাতককে তার মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন এবং নবজাতকের লালন-পালনের খরচ বহনের জন্য প্রতিশ্রুতি দেন।
এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যার প্রতিফলন নয়, বরং সমাজের লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য ও সচেতনতার অভাবও তুলে ধরে। এমন মর্মান্তিক ঘটনা প্রতিরোধে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা জরুরি।
সন্তানের জন্ম নিয়ে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজের সকল স্তরে সচেতনতা ও সহানুভূতির প্রসার প্রয়োজন, যা এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
https://slotbet.online/