• বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৫:৪১ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাপানো টাকা কোথায়, কার কাছে কত

Reporter Name / ৩৮ Time View
Update : সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪

বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাপানো টাকার পরিমাণ এবং এর বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা আলোচনা চলছে। বিশেষত সম্প্রতি ছয়টি ব্যাংককে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর বিষয়টি আরও গুরুত্ব পায়। অনেকের মনে হতে পারে, নতুন টাকা ছাপানো মানেই টাঁকশালের মেশিনে নগদ অর্থ তৈরি হওয়া শুরু হয়ে যাবে, যা পরবর্তীতে ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হবে। তবে বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময় যে পরিমাণ টাকা ছাপায়, তা সরাসরি বাজারে চলে আসে না।

প্রথমত, ব্যাংকের ভল্টে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা সংরক্ষিত থাকে, যা পরবর্তীতে বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা, যেখানে দেশের ছাপানো টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ১০০ টাকার মূল্যে প্রচলিত থাকে প্রায় পাঁচগুণ অর্থ, অর্থাৎ ৫০০ টাকার মান তৈরি হয়। তবে, টাকা ছাপালে এটি মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই বিশেষজ্ঞরা সাধারণত এর বিরুদ্ধে মত দেন।

নতুন অর্থ ছাপানোর প্রক্রিয়া সাধারণত ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, যা নগদ অর্থের প্রয়োজনকে কমিয়ে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, ধরুন একজন ব্যক্তি মাসে ১ লাখ টাকা আয় করেন, তার বেশিরভাগ খরচ ডিজিটাল মাধ্যমে পরিশোধ হয় এবং শুধুমাত্র ১০ শতাংশ অর্থ নগদে উত্তোলন করেন। অর্থাৎ, দেশে বেশিরভাগ লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে হয়, যার ফলে নতুন টাকা ছাপানোর প্রয়োজন কমে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এর ছাপানো টাকা বাজারে ছাড়ার পর তা সরাসরি ব্যাংকগুলোর কাছে পৌঁছায় না। ব্যাংকগুলো বাজারে ছাড়া টাকা তার গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করে, আর এই টাকার বড় অংশই দ্রুত মানুষের হাতে চলে যায়। এর পরে, অর্থগুলো আবার ব্যাংকে ফিরে আসে না, অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর ভল্টে জমা না হয়ে ব্যক্তি বা ব্যবসায়ীদের কাছে চলে যায়। তবে, ব্যাংকগুলোর ভল্টেও কিছু নগদ অর্থ থাকে, যা গ্রাহকদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হয়।

যদিও ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ সময় সময় বেড়ে যায়, তা মূলত গ্রাহকদের টাকা তোলার কারণে হয়, বিশেষত যখন ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়ে। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে, ব্যাংক খাতে ছাপানো টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বর মাসে কমে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৩ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। একই সময় ব্যাংকগুলো থেকে নগদ টাকা উত্তোলন করে গ্রাহকরা তাদের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে তা ব্যবহার করেন।

এছাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে টাকার একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সংরক্ষিত থাকে, যা নগদ চাহিদা মেটাতে কাজে লাগে। উদাহরণস্বরূপ, আগস্ট মাসে ব্যাংকের ভল্টে ২৬ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা ছিল, যা সেপ্টেম্বরে বেড়ে ২৭ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা হয়েছে। আবার, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে আগস্টে ৬৭ হাজার ৮৩ কোটি টাকা ছিল, যা সেপ্টেম্বরে কমে ৬৪ হাজার ২৫৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

শেষমেষ, ছয়টি ব্যাংককে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়ার জন্য নতুন টাকা ছাপানোর প্রয়োজন নেই। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই অর্থ ডিজিটাল মাধ্যমে বাজারে ছাড়বে এবং যেটুকু নগদ টাকার প্রয়োজন, তা ভল্ট থেকে সরবরাহ করবে।

এভাবে, ব্যাংক খাতে ছাপানো টাকার পরিমাণ ও বাজারে তার বণ্টন সম্পর্কে এক অবহিত দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়, যা দেশের আর্থিক ব্যবস্থাকে আরও সুষ্ঠু ও কার্যকরী করে তোলে।


More News Of This Category
https://slotbet.online/