এই ঘটনাগুলোর কথা শেয়ার করেছেন মির্জা ফখরুলের মেয়ে শামারুহ মির্জা, যিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন। তিনি ফেসবুকে একটি আবেগঘন পোস্টে সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেছেন। শামারুহ লিখেছেন, “৫ বা ৬ ডিসেম্বর, আব্বু আমাকে ফোন করে মায়ের রোগের বিষয়ে জানায়। তখন আব্বু বলেছিলেন, ‘চিন্তা করো না, ১০ তারিখে অস্ত্রোপচার হবে, তারপর ফেব্রুয়ারিতে কেমো শুরু হবে।'”
শামারুহ আরও লিখেছেন, “৮ বা ৯ তারিখে ভোর ৩ বা ৪টার দিকে আম্মু আমাকে ফোন করলেন, তখন আব্বুকে রাতে ডিবি পুলিশ নিয়ে গেছে। আমি পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম।”
২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ছিল, এবং পুলিশ তখন দেশজুড়ে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছিল। এই অভিযানে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ব্যাপক হারে গ্রেপ্তার করা হয়। ৮ ডিসেম্বর রাতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে আটক করা হয়, আর তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
শামারুহ জানান, “ডিসেম্বর মাসে, আমি কোনোভাবে টিকিট পেলাম, কিন্তু তার দাম ছিল আকাশচুম্বী। তবুও আমি ঢাকা গেলাম। আব্বুর সঙ্গে দেখা করার সময়, তাঁকে দেখে চোখে পানি চলে এসেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘মা, তুমি দেখো তোমার মায়ের চিকিৎসাটা।'”
ঢাকায় গিয়ে, শামারুহ মায়ের অস্ত্রোপচারের বিষয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন, এবং তাঁরা জানান যে এটি জরুরি ভিত্তিতে করা প্রয়োজন। দিন ঠিক হয়, কিন্তু তার মা প্রথমে রাজি হতে চাননি। “আম্মু বলেছিল, ‘তোমার আব্বুকে ছাড়া আমি অপারেশন করব না,’ কিন্তু আমি অনেক বুঝিয়ে রাজি করিয়েছিলাম।”
অস্ত্রোপচারের সময় হাসপাতালে ছিলেন শামারুহ, তাঁর দুই বোন এবং বিএনপির নেতৃবৃন্দ। এই সময়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ফোন করেছিলেন এবং তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানও যোগাযোগ করেছিলেন। শামারুহ তার পোস্টে মির্জা ফখরুলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে লিখেছেন, “তারেক রহমান একজন অসাধারণ মানুষ, যিনি আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।”
কিছুদিন পর, মির্জা ফখরুল জামিন পান এবং ২০২৩ সালের মার্চে মির্জা ফখরুল ও তাঁর পরিবার সিঙ্গাপুরে যান রাহাত আরা বেগমের চিকিৎসার জন্য। সেখানকার চিকিৎসকরা কেমোথেরাপি শুরু করতে বলেন এবং তাঁরা দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তী সময়ে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কেমোথেরাপি শেষ হয় এবং রেডিয়েশন থেরাপির জন্য সিঙ্গাপুরে ফেরত যান তাঁরা।
এই সময়ে, মির্জা ফখরুল নিজেও কিছু স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন। শামারুহ জানান, চিকিৎসক তাঁর বাবা মির্জা ফখরুলকে মানসিক চাপ কমানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু, ২০২৩ সালের অক্টোবরে আবার মির্জা ফখরুলকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।
শামারুহ এই ঘটনা সম্পর্কে লিখেছেন, “আব্বুকে আবার জেলে নিয়ে গেল! আর ভালো লাগছে না।” তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, “মায়ের অসুখ নিয়ে কিছু অনলাইন মিডিয়ায় অপপ্রচার হচ্ছে, এটা ভাবতেই পারছি না আমার মা আর আব্বু কিভাবে এইসব দেখছেন।”
অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত শামারুহ বলেন, “আমার বাবা অনেক বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, কারাগারে কাটিয়েছেন। দেশের মানুষের জন্য তাঁর অবদান অমুল্য। কিন্তু যখন এমন একজন মানুষের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হয়, তখন সেটি সত্যিই দুঃখজনক। আর এজন্যই আমি ফেসবুকে সেসব দিনের কথা শেয়ার করেছি।”