• বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৫:২৯ পূর্বাহ্ন

শিক্ষার্থীদের সংঘাত: দায়িত্বশীলতার অভাব

Reporter Name / ৩৬ Time View
Update : রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪

ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাত এবং তার পরিণতি নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে হামলা, ভাঙচুর এবং সম্পত্তির ক্ষতি করেছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। এসব ঘটনা শুধুমাত্র শিক্ষার পরিবেশকে নষ্ট করছে, বরং শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যতকেও হুমকির মুখে ফেলছে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে শিক্ষার্থীদের অবদান অনস্বীকার্য ছিল। ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার শাসনের অবসান ঘটিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের উন্মেষ হয়েছিল। তবে বর্তমান সময়ে, যখন শিক্ষাঙ্গনকে রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে মুক্ত রাখার প্রয়োজন ছিল, তখনই আমরা দেখতে পাচ্ছি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাতের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এটি একটি গুরুতর সমস্যা, কারণ সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার উপর এর প্রভাব অনেক দূরপ্রসারী হতে পারে।

ঢাকা শহরের বিভিন্ন কলেজে চলমান সংঘাতে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ এবং সেন্ট গ্রেগরি কলেজসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে। ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার পাশাপাশি, শিক্ষার্থীরা সম্পদ ধ্বংস ও লুটপাটের মাধ্যমে আরও বৃহত্তর ক্ষতির সৃষ্টি করেছে। এসব ঘটনায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, যার ফলে ক্ষতি ও বিশৃঙ্খলা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ১৮ নভেম্বর, যখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর, তার প্রতি চিকিৎসক কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানাতে হাসপাতালে বিক্ষোভ শুরু করেছিল। এর পরপরই, কলেজের শিক্ষার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে সহিংসতার মাধ্যমে প্রতিশোধ নিতে শুরু করে। একের পর এক হামলা ও পাল্টা হামলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশকে অস্থির করে তুলেছে।

এমন পরিস্থিতিতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হামলার পরিকল্পনা ও ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আরও উসকানি সৃষ্টি করেছে। যেখানে কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারত, সেখানে তারা সময় মতো সাড়া দেয়নি। এর ফলে, পরিস্থিতি আরও জটিল ও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে এমন সহিংসতার ঘটনা আরো বাড়ছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এই ধরনের সংঘাত কোনোভাবেই শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা সমস্যা নয়, এটি একটি গভীর সামাজিক সংকটের লক্ষণ। ছাত্রসমাজের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে, তা কেবল শিক্ষার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং এটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও ভবিষ্যত প্রজন্মের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দেশের মানুষ আরও দায়িত্বশীল ও সংযত আচরণের প্রত্যাশা করে, যা শিক্ষার পরিবেশকে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ রাখবে।

তথ্য অনুসারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধি পেলে এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও একটি হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এর ফলে, সরকারের কাছে আরও দায়িত্বশীলতার দাবি ওঠে, যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা ও সহিষ্ণুতার চেতনা তৈরি করা যায়।


More News Of This Category
https://slotbet.online/