কিন্তু সম্প্রতি, সরকারের পক্ষ থেকে এই দায়মুক্তি আইন বাতিল করা হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে জানানো হয়েছে যে, সংসদ কার্যকর না থাকায় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনটি বাতিল করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আইন বাতিল হলেও এর অধীনে সম্পাদিত সমস্ত চুক্তি বা ব্যবস্থা গৃহীত হবে এবং এগুলোর চলমান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
আইনটি বাতিলের আগে, ১৪ নভেম্বর হাইকোর্ট দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান অবৈধ ঘোষণা করেছিল এবং এই আইনটির বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। সরকার গত ১৮ আগস্ট আইনের কার্যক্রম স্থগিত করে ঘোষণা করেছিল যে, এই আইনের অধীনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ক্রয় প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ থাকবে।
বিশেষ বিধান আইনের উদ্দেশ্য ছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ দ্রুততার সাথে বাড়ানো, বিশেষত লোডশেডিং সমস্যা সমাধানে। তবে এই আইনটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা চলছিল। আইনটির আওতায় বিদ্যুৎ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছিল, যার মধ্যে অন্যতম ছিল রেন্টাল (ভাড়াভিত্তিক) এবং কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ।
এছাড়া, এই আইনটির মাধ্যমে জ্বালানি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল, কিন্তু এই কেন্দ্রগুলো অপারেশন চালু রাখতে পিডিবিকে অধিক খরচ বহন করতে হয়। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ১৪৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, যার মধ্যে ৬২টি সরকারি এবং ৮১টি বেসরকারি খাতের। তবে, পিডিবির খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য বারবার মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে সরকার ভর্তুকি দিয়ে আসছে।
বিশেষ বিধান আইন নিয়ে এক সময় বিশেষজ্ঞরা এটি সমর্থন করেছিলেন, কারণ তারা মনে করেছিলেন যে, এটা বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ হতে পারে। তবে, আইনটির দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসায়িক সুবিধা দেওয়ার কারণে তা নিয়ে বিতর্ক বৃদ্ধি পায়। এর মাধ্যমে চালু হওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মাঝে মাঝে চালু থাকলেও, তাদের খরচ সাশ্রয়ী হয়নি।
এছাড়া, এই আইন ব্যবহার করে গ্যাস আমদানিতেও দুটি ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা মূল্যের এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করা হয়েছে।
শেষপর্যন্ত, এই আইনটির আওতায় গৃহীত প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগই বর্তমানে সমস্যায় পড়েছে, কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। ফলস্বরূপ, গত তিন বছর ধরে গ্রীষ্ম মৌসুমে লোডশেডিং পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে, যা পিডিবির আর্থিক সমস্যায় আরও বৃদ্ধি করেছে।
এখন, নতুন সরকারের এই আইন বাতিলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন এবং কার্যকরী ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।