• বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ১০:১৫ পূর্বাহ্ন

রিকশা নিয়ে যে কারণে দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা প্রয়োজন

Reporter Name / ৪৯ Time View
Update : শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪

ঢাকা শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশার বিষয়টি সম্প্রতি বেশ আলোচনায় এসেছে এবং একটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ১৫ মে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় তৎকালীন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ঢাকা শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে রিকশাচালক ও মালিকেরা আন্দোলন শুরু করেন, এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী এর সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেন। এর কিছুদিন পর, আবারও এই ইস্যু আদালতের দিকে চলে যায়, যখন প্যাডেলচালিত রিকশার মালিকেরা রিট করেন, অভিযোগ করে যে ব্যাটারিচালিত রিকশার উপর নিষেধাজ্ঞা সঠিকভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। ১৯ নভেম্বর, হাইকোর্ট এ বিষয়ে রুল জারি করে এবং ঢাকা শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। এরপর ব্যাটারিচালিত রিকশার মালিকেরা আন্দোলনে নামেন এবং চাপের মধ্যে সরকার হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করার জন্য আবেদন করে।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এটি স্পষ্ট যে, সরকারের পক্ষ থেকে একটি সুপরিকল্পিত, দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এই নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে রাজনীতিবিদদের লক্ষ্য থাকা উচিত মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং প্রযুক্তির অগ্রগতিকে সহায়ক করা। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বুঝা যায় যে, এ ব্যাপারে সরকারের নেতৃত্বে একটি দীর্ঘমেয়াদি ভাবনা ও কৌশল প্রয়োজন।

ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রযুক্তির অগ্রগতির প্রতিফলন এবং এটি একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখা প্রয়োজন। বাংলাদেশের পরিবহন খাতে যেখানে সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতার দিকে নজর দেওয়া জরুরি, সেখানে ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যবহার প্রবৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে সহায়ক হতে পারে। প্যাডেলচালিত রিকশার তুলনায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বেশি গতিশীল এবং দক্ষ, ফলে এটি সড়ক পরিবহনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।

এছাড়া, ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের জীবনমানও উন্নত করছে। এই প্রযুক্তি চালকদের জন্য কঠিন শারীরিক শ্রম কমিয়ে এনে তাদের কর্মজীবনে একটি আধুনিকতাও এনে দিয়েছে। আধুনিক ডিজাইন ও উন্নত মানের প্রযুক্তির মাধ্যমে এই যানগুলো চালকদের প্রখর রোদ ও বৃষ্টি থেকেও সুরক্ষা প্রদান করছে।

তবে, এই পরিবর্তন কিছু সমস্যাও তৈরি করছে। সড়কে দ্রুতগতির যানবাহনের সাথে ধীরগতির ব্যাটারিচালিত রিকশা সহাবস্থান করতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সঠিক সড়ক ব্যবস্থাপনা, উপযুক্ত ডিজাইন ও চালকদের দক্ষতা নিশ্চিত করা না হলে, দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। বিশেষভাবে, ১৯ নভেম্বর একটি দুর্ঘটনায় এক ছাত্রীর মৃত্যু এই বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

সরকারের উচিত একটি সুসংহত নীতি নির্ধারণ করা, যেখানে একটি পরিষ্কার দিকনির্দেশনা থাকবে যে, আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে দেশে প্যাডেলচালিত রিকশা বন্ধ হয়ে যাবে। শহরের বিভিন্ন পর্যায়ে এই সময়সীমা ভিন্ন হতে পারে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সকল পক্ষকে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় দেবে এবং নতুন ডিজাইন ও প্রযুক্তি গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করবে। সরকার যদি একটি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে, তাহলে এটি রিকশা মালিকদের পুঁজি ফিরে পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময়ও দিতে পারে এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে।

এদিকে, ব্যাটারিচালিত রিকশার ডিজাইন আরও উন্নত ও নিরাপদ করতে হবে। সরকারের উচিত, এ বিষয়ে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং নিরাপদ ডিজাইন নিশ্চিত করার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া। বর্তমান পরিস্থিতিতে, সরকারের কাছে ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন, রিকশার নিবন্ধন, নিরাপদ ডিজাইন, চালকদের প্রশিক্ষণ এবং রিকশাগুলোর কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া, ব্যাটারিচালিত রিকশার বিদ্যুৎ খরচ ও অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিষয়েও সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সঠিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা এবং সৌরশক্তির ব্যবহারের দিকে সরকারের নজর দেয়া উচিত। পরিবেশগত কারণে, ব্যবহৃত ব্যাটারির নিষ্কাশন ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যবস্থা তৈরি করাও অপরিহার্য।

সব মিলিয়ে, ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রযুক্তির উন্নতি এবং শ্রমজীবী মানুষের জন্য একটি ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে দেখা যেতে পারে, তবে এটি সুসংহত নীতির মাধ্যমে দেশের জন্য লাভজনক হয়ে উঠবে। সরকারের উচিত, সমাজের প্রতিটি স্তরের জন্য সুবিধাজনকভাবে প্রযুক্তির অগ্রগতি উপকারে নিয়ে আসা।


More News Of This Category
https://slotbet.online/