গত বুধবার সকালে সিলেটের বারুতখানা এলাকায় সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আলাপ হয়। তিনি জানান, ৪৫ বছর আগে ১৫ লিটার পানির টিন বিক্রি করতেন মাত্র ২৫ পয়সায়। বর্তমানে, পানির মূল্য ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত হয়ে গেছে, তবে তার মতে, সে সময়ের ২৫ পয়সা এখনকার ৪০ টাকার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান ছিল।
সাইফুল ইসলাম বারুতখানা এলাকার একটি বাসা থেকে পানি সংগ্রহ করেন, এবং তাঁর মতো আরও ১২-১৫ জন বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ করে জীবন নির্বাহ করেন। সারা দিন তাড়াহুড়োর মধ্যে পানি সংগ্রহ করে, হোটেল, রেস্তোরাঁ, বাসা এবং অফিসে সরবরাহ করেন। এ দলের মধ্যে সাইফুল ইসলামের বয়সই সবচেয়ে বেশি। অন্যরা তাঁকে “ওস্তাদ” হিসেবে সম্মান দেয়। অনেক সহকর্মী তাঁর সঙ্গে কাজ করত, তবে বয়সের কারণে তারা কেউ আর এই পেশায় নেই। কিন্তু সাইফুল ইসলাম এখনও এই কাজে রয়েছেন।
আফজাল হোসেন (৪৫), একজন পানি বিক্রেতা, জানান যে তাঁর বাবা অনেক আগে থেকেই সাইফুল ইসলামের সঙ্গে পানি বিক্রি করতেন, এবং বাবার পরামর্শেই তিনি এই কাজে যুক্ত হন। প্রায় ২৫ বছর ধরে তিনি এই পেশায় আছেন। গরমের সময় পানি বিক্রির চাহিদা বেশি থাকে, তবে শীতে কিছুটা সংকট দেখা দেয়, কারণ ঠান্ডা পানি নিয়ে কাজ করা কঠিন হয়।
পানি বিক্রেতাদের কাছ থেকে জানা যায়, তাদের নির্দিষ্ট কিছু স্থায়ী গ্রাহক থাকে। অন্যথায়, রাস্তায় পানি বিক্রি করতে হয়। যাদের স্থায়ী গ্রাহক বেশি, তাদের আয়ও বেশি হয়। সাধারণত, তারা অন্যের বাড়ি থেকে পানি কিনে বিক্রি করেন, যার জন্য কিছু অংশ তাদের আয় থেকে দিতে হয়। যদি সরকার তাদের জন্য একটি গভীর নলকূপ এবং পাম্পের ব্যবস্থা করত, তাহলে আয় থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় করার সুযোগ তৈরি হত।
সাইফুল ইসলাম জানান, তাঁর একমাত্র মেয়ে আছে, যাকে তিনি নিজের সঞ্চিত টাকায় বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি স্ত্রী আছেদা বেগম (৫৫) এর সঙ্গে সিলেটে একা থাকেন, আর স্ত্রীর বাড়ি জামালপুরে। দুই মাস পর পর তিনি স্ত্রীকে দেখতে যান। পানির ব্যবসা থেকে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। সাইফুল ইসলাম জানান, আগে তিনি কাঁধে পানি বয়ে নিয়ে বিক্রি করতেন, যা শারীরিকভাবে বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। তবে বয়সের কারণে এখন কাজ কিছুটা সহজ হয়েছে, কারণ এখন গভীর নলকূপ থেকে পাম্পের মাধ্যমে পানি সংগ্রহ করে ঠেলাগাড়িতে রাখেন। তবুও, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর কারণে সংসার চালাতে বেশ কষ্ট হয়।
এভাবে সাইফুল ইসলাম ৪৫ বছর ধরে তাঁর পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে তবুও আয় এবং জীবনযাত্রার ব্যয় মেলাতে অনেক কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।