ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশের উত্তরের অঞ্চলের পৌরসভা প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সেখানে ৬০ হাজার বেসামরিক নাগরিককে আরও দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়ার ফলে শহরগুলো এখন প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে।
খবরে বলা হয়, বৈঠকে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ ছিলেন এবং তাদের মধ্যে হতাশাও ছিল। কেউ কেউ বলেন, ইসরায়েল লেবাননে তার শত্রুদের বিরুদ্ধে চাপ কমিয়ে দিয়েছে এবং ইসরায়েলি নাগরিকদের ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার কোনও স্পষ্ট পরিকল্পনা নেই।
একটি পত্রিকায় কিরয়াত শমোনার মেয়র জানিয়েছেন, তিনি যুদ্ধবিরতির সফলতা নিয়ে সন্দিহান। তিনি দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের একটি বাফার জোন তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
ইসরায়েলের একটি টেলিভিশন চ্যানেল জরিপ চালিয়েছে, যেখানে যুদ্ধবিরতি সমর্থনকারী ও বিরোধিতাকারী দু’পক্ষের মতামত উঠে এসেছে। প্রায় অর্ধেক অংশগ্রহণকারী মনে করেন, হিজবুল্লাহ এখনও পরাজিত হয়নি, আর ৩০ শতাংশ মনে করেন যুদ্ধবিরতি চুক্তি খুব তাড়াতাড়ি ভেঙে পড়বে।
লেবাননে গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি, কিন্তু ইসরায়েল লেবানন থেকে তৎক্ষণাৎ সেনা প্রত্যাহার করবে না, যদিও ৬০ দিনের মধ্যে তাদের প্রত্যাহার করতে হবে।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সেখানে এক অত্যন্ত আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল তাদের অভিযান স্থগিত করবে না এবং হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহসহ তার সহযোগীদের হত্যার নির্দেশ দেন।
নেতানিয়াহু বলেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তির সময় ইসরায়েলের বাহিনীকে সময় দেওয়া হয়েছে তাদের অস্ত্রশস্ত্র পুনঃসরবরাহ করার জন্য। তারা চাইছে, হিজবুল্লাহ তাদের সীমান্ত থেকে আরও দূরে চলে যাক, যাতে ইসরায়েলি নাগরিকরা নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারেন।
হিজবুল্লাহ ও ইরানও যুদ্ধবিরতি চান, কারণ তারা ক্ষতির ক্ষতিপূরণ এবং নিজেদের সামরিক অবস্থান পুনর্গঠনের সুযোগ চাচ্ছে। ইরান, যা মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিরোধ অক্ষের নেতা, যুদ্ধের শিকার হওয়া থেকেও বিরত থাকতে চায়।
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কিছুটা সাময়িক শ্বাসপ্রশ্বাস দিলেও, এটি মধ্যপ্রাচ্যের স্থায়ী সমাধান নয়। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ৬০ দিন, এবং তার মধ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা স্থায়ী সমাধানে পৌঁছানোর আশা করেছিল। তবে এটি সাময়িক শান্তিরই প্রতীক।
বিশ্ব রাজনীতিতে পরিবর্তন আসছে, এবং ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে ইসরায়েল যুদ্ধে কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছে, যাতে তা আসন্ন যুদ্ধবিরতির চুক্তির থেকে ভিন্ন। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের শক্তি বৃদ্ধি এবং তাদের সামরিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখন আরও শক্তিশালী, যা ভবিষ্যতে নতুন সংকট তৈরি করতে পারে।