জিকা ভাইরাসের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে রোগের উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি বিশ্রাম নেয়ার পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করতে হয়। জ্বর এবং ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হয়। গুরুতর অবস্থায় রোগীকে নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে।
ঢাকা শহরে এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ানো জিকা ছাড়াও বর্তমানে চিকুনগুনিয়া এবং ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। তিনটি রোগই একযোগে শহরে সংক্রামিত হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, জিকা ভাইরাস গর্ভবতী নারীদের জন্য মারাত্মক হতে পারে, কারণ এটি গর্ভস্থ সন্তানের মাথার আকার ছোট হওয়ার সম্ভাবনা (মাইক্রোসেফালি) সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, বৃদ্ধ বয়সীদের জন্যও এটি গুলেনবারি সিনড্রোমের (GBS) ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, যা চলনক্ষমতা হারানোর কারণ হতে পারে।
আইইডিসিআর এবং আইসিডিডিআরবি প্রতিষ্ঠানগুলি এই জিকা ভাইরাস শনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আইইডিসিআর সম্প্রতি জানায় যে, তাদের গবেষণাগারে ঢাকা শহরের ধানমন্ডি, শ্যামলী এবং বনানী এলাকায় বসবাসকারী ব্যক্তিদের শরীরে জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ের মধ্যে আইসিডিডিআরবির গবেষকরা তাঁদের ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা করে আরও চারজনের শরীরে জিকা শনাক্ত করেছেন।
এছাড়া, বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, জিকা ভাইরাসের দুটি ধরনের মধ্যে এশিয়ান প্রজাতি ঢাকায় পাওয়া গেছে। যদিও এই ভাইরাসের ব্যাপারে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তেমন কোনো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ২০২৩ সালের শেষের দিকে ৫ জনের শরীরে জিকা ভাইরাস শনাক্ত হলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিষয়টি জনসমক্ষে আনতে গড়িমসি করেছে, যা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে সমালোচিত হয়েছে।
তবে চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু এবং জিকা—এই তিনটি রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং মশার বিস্তার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। জনগণকে সচেতন করে তোলার পাশাপাশি চিকিৎসকদের এই নতুন রোগগুলোর চিকিৎসায় প্রস্তুত রাখা জরুরি।