• বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৬:০৯ পূর্বাহ্ন

বায়ুদূষণ রোধে আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হবে

Reporter Name / ৩৫ Time View
Update : বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পৃথিবীতে বায়ুদূষণ একটি অত্যন্ত গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে, যেখানে মানুষের ঘনবসতি এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণ দ্রুত বেড়ে চলেছে, সেখানে বায়ুদূষণের মাত্রা প্রতিদিনই আরও খারাপ হচ্ছে। ঢাকায় বসবাসকারী মানুষের কাছে এই বিষয়টি এক অভ্যস্ত বাস্তবতায় পরিণত হয়ে গেছে। কল্পনাও করা যায় না, যদি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজকের দিনে ঢাকার বাতাসের বিষাক্ততা সম্পর্কে কিছু বলতেন, তবে সেই কথার আক্ষরিক অর্থে যে বায়ুদূষণের ভয়াবহতা উল্লেখ করা হতো, তা খুবই স্পষ্ট।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক পরিবেশগত প্রতিষ্ঠান “আইকিউএয়ার”-এর রিপোর্ট অনুসারে, সম্প্রতি ঢাকার বায়ু দূষণের অবস্থান বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ ছিল। প্রতিষ্ঠানটির বায়ুদূষণ স্কেল অনুযায়ী, ঢাকার বায়ুর স্কোর ছিল ২৩৪, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তুলনায় অস্বাস্থ্যকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর মতে, একটি শহরের বায়ুতে প্রতি ঘনমিটার ২.৫ মাইক্রোমিটারের ক্ষুদ্র বস্তুকণার (PM 2.5) উপস্থিতি যদি ১০ মাইক্রোগ্রাম ছাড়িয়ে যায়, তবে তা স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। ঢাকায় এই কণার উপস্থিতি বর্তমানে ৪৩ শতাংশ বেশি, যা এই শহরের বাসিন্দাদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।

এ পরিস্থিতি নতুন কিছু নয়। বহুদিন ধরেই ঢাকাবাসী এই বায়ু দূষণের প্রভাবে স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছে। তবে, বায়ুদূষণ যে শুধু শারীরিক ক্ষতি করছে তা নয়, এই দূষণের কারণে শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ছে, যা ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ হতে পারে।

ঢাকায় বায়ুদূষণের প্রধান উৎসগুলো নির্দিষ্ট করা হয়েছে। প্রথমত, শহরের আশেপাশে অবস্থিত অবৈধ ইটভাটাগুলো, যা একদিকে নির্মাণকাজের জন্য কাঁচামাল সরবরাহ করে, অন্যদিকে তাদের কর্মকাণ্ড বাতাসে বিষাক্ত ধোঁয়া ও ধূলিকণা ছড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যেগুলো প্রচুর পরিমাণে কালো ধোঁয়া সৃষ্টি করে। তৃতীয়ত, অব্যবস্থাপনায় পরিচালিত নির্মাণকাজ, যা বাতাসে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ধুলিকণা ছড়িয়ে দেয়। এছাড়া, রাস্তার পাশে প্লাস্টিক ও শুকনো পাতা পোড়ানো, শহরের বিভিন্ন স্থানে আবর্জনা ফেলা এবং অপরিকল্পিত নির্মাণ কার্যক্রম এ দূষণের পরিমাণকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এছাড়া, শীতকালে, যখন বৃষ্টি কম এবং বাতাস শুষ্ক থাকে, তখন ধুলিকণার উপস্থিতি আরও বেড়ে যায়। রাজধানীর ছিন্নমূল মানুষ যখন রাস্তায় বা পার্কে কাগজপত্র পুড়িয়ে শীত নিবারণ করেন, তখন সেই ধোঁয়া বাতাসে মিশে দূষণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়।

যদিও প্রায় সবাই জানেন যে, বায়ুদূষণ কমানোর জন্য কি করা উচিত—অথচ কেন এটি কমছে না? এই প্রশ্নের উত্তর অত্যন্ত পরিষ্কার: বিষয়টি তথ্য বা জ্ঞানের অভাব নয়, বরং সচেতনতার অভাব। সরকার এবং বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই এই বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে, সেমিনার ও আলোচনা সভা আয়োজন করছে, কিন্তু বাস্তবে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।

ঢাকার বায়ুদূষণের এই সংকট এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে এই সমস্যা আরও বড় আকার ধারণ করবে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি অবিলম্বে বায়ুদূষণ কমানোর জন্য কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ না করে, তবে আগামীতে এর ভয়াবহ প্রভাব পড়বে।

ঢাকাকে বায়ুদূষণমুক্ত করার জন্য কিছু জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রথমত, অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে হবে এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নির্মাণকাজে পদ্ধতি পরিবর্তন করে ধূলিকণা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তৃতীয়ত, পরিবহন এবং নির্মাণসামগ্রী পরিবহন ব্যবস্থার প্রতি মনোযোগ দিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। এছাড়া, রাস্তা পরিষ্কার রাখতে নিয়মিত পানি ছিটানোর পাশাপাশি, শহরের বিভিন্ন জায়গায় আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে।

শুধু সরকারের পক্ষ থেকে নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্যও এই সংকট সমাধান করা একান্ত প্রয়োজন। জনসচেতনতা বৃদ্ধি, নিয়মিত পরিবেশগত সেমিনার, কর্মশালা আয়োজন, এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনা প্রভৃতি বিষয়গুলি নিশ্চিত করতে হবে।

এখনও সময় রয়েছে, যদি আমরা সকলেই একযোগে কাজ করি, তবে ঢাকার বায়ু দূষণ কমানো সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে, আমাদের মানসিকতা এবং কার্যক্রমে একটি গভীর পরিবর্তন আনতে হবে।


More News Of This Category
https://slotbet.online/