সিডিএ (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) নতুন টোলের হার সংক্রান্ত প্রস্তাব গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে গত ৩ নভেম্বর। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে টোল আদায় কার্যক্রম শুরু হবে। তবে, এখনও চূড়ান্ত অনুমোদন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে, এক্সপ্রেসওয়ের ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশে পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচল করছে, যা লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত বিস্তৃত।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে, এবং ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক্সপ্রেসওয়ের টোলের হার নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর, এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ার আগেই টোলের হার পুনরায় পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং তা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
টোলের হার পরিবর্তন
নতুন টোলের প্রস্তাবে মোটরসাইকেলের জন্য কোনও টোল রাখা হয়নি, কারণ সিডিএ জানিয়ে দিয়েছে, এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল চলাচল নিরাপত্তার কারণে নিষিদ্ধ থাকবে। তবে অন্যান্য যানবাহনের জন্য টোলের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হয়েছে।
- কার, জিপ এবং মাইক্রোবাস:
- আগে ১০০ টাকা ছিল, এখন ৫০ থেকে ১০০ টাকা।
- পিকআপ:
- আগে ১৫০ টাকা ছিল, এখন ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা।
- মিনিবাস:
- আগে ২০০ টাকা ছিল, এখন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।
- বাস:
- আগে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ছিল, এখন ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা।
- ট্রাক:
- চার চাকার ট্রাকের জন্য ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, ছয় চাকার ট্রাকের জন্য ৩০০ টাকা।
- কাভার্ড ভ্যান ও ট্রেইলর:
- আগে ৫০০ টাকা ছিল, এখন ৪৫০ টাকা।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চলাচল
এছাড়া, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চলাচল করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সিডিএ জানিয়েছে, সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলোর জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা। প্রথমে সিএনজি অটোরিকশার চলাচল নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু সাধারণ মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করে তাদের জন্য চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যদিও, সিডিএর প্রকৌশলীরা মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করার পক্ষেই ছিলেন, তবে সিএনজি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে যাতে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
চট্টগ্রামের সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া জানিয়েছেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশার চলাচল বাড়ানোর সিদ্ধান্তের ফলে এক্সপ্রেসওয়ের ব্যবহার জনপ্রিয় হতে পারে, তবে দুর্ঘটনা এবং সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের ব্যয় ও কার্যক্রম
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের মোট ব্যয় ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা, এবং এটি সরকারের ঋণ পরিশোধের জন্য টোল আদায় করবে। এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন র্যাম্পে ওঠানামার সুযোগ রয়েছে, যার মধ্যে জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ, টাইগারপাস, লালখান বাজার, নিমতলা, কেইপিজেড, ফকিরহাট, সিইপিজেডের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি রয়েছে।
চূড়ান্ত টোলের হার অনুমোদন পাওয়ার পর, এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার শুরুর জন্য সিডিএ প্রস্তুত। সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, টোলের হার সহনীয় রাখার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে জনগণের ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। নতুন সরকারের নির্দেশনায় টোলের হার পুনরায় কমানো হয়েছে, যাতে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারীদের জন্য একটি টেকসই এবং কার্যকর পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়।
সর্বশেষ সিদ্ধান্ত
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চট্টগ্রামের নগর পরিবহন ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। সঠিক নীতি ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এক্সপ্রেসওয়েটি যাত্রীদের জন্য আরও নিরাপদ, দ্রুত এবং সাশ্রয়ী যাতায়াতের সুযোগ তৈরি করবে।