শ্রমিকদের অভিযোগ, প্রায় চার বছর আগে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) অবস্থিত লেনী ফ্যাশনস ও লেনী অ্যাপারেলস কারখানাগুলি বকেয়া বেতন রেখে বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় থেকে শ্রমিকদের পরিশোধিত হয়নি তাদের পাওনা। একটির বিক্রি হলেও, সেই টাকা ব্যাংকে জমা থাকলেও শ্রমিকদের বকেয়া বেতন দেওয়া হয়নি। ফলে শ্রমিকেরা এই বেতন পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন করছেন।
একজন নারী শ্রমিক বলেন, ‘‘আমরা চার বছর ধরে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে এসেছি, কিন্তু কোনো তারিখের নিশ্চয়তা মেলেনি। সর্বশেষ, সেপ্টেম্বর মাসে তারা বলেছিল ৩০ নভেম্বরের মধ্যে টাকা দেওয়া হবে, কিন্তু এখন তারা নতুন করে বলছে যে টাকা পরিশোধ আরও পিছিয়ে যাবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা বেকার হয়ে পড়েছি, কারণ বেতনের জন্য বারবার ছুটি নিয়েও কোনো সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা সড়ক ছাড়ব না, যদি আমাদের নির্দিষ্ট কোনো তারিখ না দেওয়া হয়।’’
অন্য একজন শ্রমিক মো. আজাদ জানান, ‘‘একটি কারখানা বিক্রি হয়ে গেছে, কিন্তু আমাদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে না। বর্তমান সরকার এবং কিছু মধ্যস্থতাকারী কর্তৃপক্ষ আমাদের ঘুরাচ্ছে, টাকা পরিশোধে অবহেলা করছে।’’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘‘যতদিন না সরকারি কর্তৃপক্ষ আমাদের বকেয়া বেতন পরিশোধের নির্দিষ্ট তারিখ দেয়, ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে।’’
এদিকে, সড়ক অবরোধের কারণে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের উভয় পাশে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। অনেক চালক বিকল্প সড়ক ব্যবহার করছেন। সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সওগাতুল আলম জানান, ‘‘শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ করার ফলে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহনগুলো বিকল্প পথ ব্যবহার করছে, যাতে যান চলাচল সচল রাখা যায়।’’
শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, ‘‘আমরা শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করছি এবং তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে বেপজা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।’’
বেপজার নির্বাহী পরিচালক আনোয়ার পারভেজ জানান, ‘‘লেনী ফ্যাশন ও লেনী অ্যাপারেলস দুটি কারখানা একই মালিকের অধীনে, এবং শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। লেনী অ্যাপারেলস বিক্রি করা হয়েছে, কিন্তু লেনী ফ্যাশন এখনো বিক্রি হয়নি। বিক্রির জন্য পাঁচবার নিলাম হলেও উপযুক্ত ক্রেতা পাওয়া যায়নি। তবে আমরা চেষ্টা করছি এবং দ্রুত নিলামের মাধ্যমে সেটি বিক্রি করার পরিকল্পনা রয়েছে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘একারণে, দুটি কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া একসঙ্গে পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু আইনগত জটিলতার কারণে একটি কারখানার বিক্রির টাকা অন্যটির শ্রমিকদের দিতে পারছি না। তবে আশা করা যাচ্ছে যে দ্রুতই নিলামের মাধ্যমে সব শ্রমিকের বকেয়া পরিশোধ করা সম্ভব হবে।’’