১৪ বছর আগে মায়ের মৃত্যু হয়েছিল আলপনা রানী (২১) ও বিলাস কুমার (১৫)-এর। তিন বছর পর বাবাও মারা যান। এরপর থেকে চাচার কাছে আশ্রয় নিয়েছে তারা। নানা সংগ্রামের মধ্যেও লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু এখন সঙ্কটে পড়েছেন। খাবার জুটলেও থাকার জায়গার সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের চাঁইসাড়া গ্রামে এক ছোট কক্ষে বসবাস করছেন আলপনা রানী ও বিলাস কুমার। তাঁদের বড় চাচা হরেন কুমার (৬৩), পেশায় নরসুন্দর, তাদের দেখাশোনা করছেন। তিনি জানান, তার ছোট ভাই বীরেন সরকার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অসুস্থ থাকাকালীন ২০১০ সালে রাজশাহী নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়, কিন্তু পরে বীরেন মারা যান ২০১৩ সালে। তার মৃত্যুপরবর্তী সময়েই বাসনা রানীও অসুস্থ হয়ে মারা যান।
বর্তমানে আলপনা রানী নরদাশ ডিগ্রি কলেজের বিএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী, আর বিলাস কুমার স্থানীয় হাট গাঙ্গোপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী। আলপনা বলেছিলেন, অর্থের অভাবে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। পড়াশোনার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছেন, কিন্তু কখনো কখনো অর্থের অভাবে পড়াশোনা বন্ধও হয়ে গেছে। তাঁদের কাছে দুটি মাত্র পোশাক রয়েছে এবং ছোট একটি কক্ষে চৌকিতে শোয়ার জায়গা মেলে।
গ্রামের বাড়িতে তিনটি কক্ষের একটি বাড়ি রয়েছে, যেখানে তাদের বসবাস। একটি কক্ষে আলপনা ও বিলাসের পড়াশোনা এবং থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছোট একটি চৌকিতে তাঁরা পড়াশোনা করে, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। কিছুদিন আগে এলাকার লোকজন তাঁদের দুঃখ-দুর্দশা জানিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে বিষয়টি অবহিত করেছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁর পক্ষ থেকে অনাথ ভাই–বোনদের সাহায্য করার চেষ্টা করবেন।
বিলাস কুমার জানায়, তার মা-বাবার মুখ সে আর মনে করতে পারে না। তবে বর্তমানে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে খুব সমস্যা নেই, কিন্তু থাকার সমস্যা সবচেয়ে বড়। তাঁর স্কুলের এক শিক্ষক বিনামূল্যে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন, তবে বই কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ নেই।
স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, তারা বিলাসকে বিনা খরচে পড়াচ্ছেন এবং অন্যান্য সাহায্যও করছেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজীব আল রানা জানান, তাদের জন্য বাড়ি নির্মাণের আবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে বর্তমানে গৃহনির্মাণ প্রকল্প বন্ধ থাকলেও, ভবিষ্যতে এই প্রকল্প চালু হলে প্রথমেই তাদের জন্য একটি বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এখনো অনেক সাহায্যপ্রাপ্তির আশায় অনাথ দুই ভাই–বোন কষ্টের মধ্যেও তাদের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।