সোমবার দুপুরে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার নজির বোদা উপজেলার মুসলিমবাগ এলাকায় শরিফা খাতুনের ভাড়া বাড়িতে যান। তাঁর সাথে ছিল চাল-ডাল, শাকসবজি ও কম্বল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ময়দানদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বারসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
গত রবিবার স্থানীয় এক সংবাদ মাধ্যমে পঞ্চগড়ে শিশু নুরী নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার উপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ইউএনও শাহরিয়ার নজির সংবাদটি দেখার পর বিষয়টি নিয়ে সরাসরি শরিফা খাতুনের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, পরিবারটির প্রধান সমস্যাটি ছিল খাবারের অভাব, এবং সেই কারণে হতাশায় ভুগছিলেন শরিফা। পরবর্তী সময়ে বোদা উপজেলা প্রশাসন পরিবারটিকে সহায়তা হিসেবে ৩০ কেজি চাল, শাকসবজি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদান করেছে। এছাড়াও কম্বলসহ অন্যান্য ত্রাণও প্রদান করা হয়েছে।
ইউএনও জানান, শরিফা খাতুনকে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এবং ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে আরও সহায়তা প্রদান করা হবে। বিশেষত, পরিবারটির বড় দুই সন্তানকে স্কুলে পড়াশোনার জন্য সহায়তা করার কথা ভাবা হচ্ছে।
শরিফা খাতুন, যিনি পঞ্চগড়ের ময়দানদীঘি ইউনিয়নের মুসলিমবাগ এলাকায় মায়ের সঙ্গে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন, তাঁর জীবনযাত্রা খুবই কষ্টসাধ্য। প্রথম স্বামীর ঘরে একটি ছেলে এবং দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে দুটি মেয়ে রয়েছে। মেয়ে দুটি একজন শ্রমিক মায়ের সঙ্গে থাকলেও, তার স্বামী (নুর ইসলাম) অন্যত্র থাকেন এবং ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
এ ঘটনার সূত্রপাত হয় গত মঙ্গলবার, যখন শরিফা খাতুন শিশুটিকে একটি হলুদখেতে রেখে পালানোর চেষ্টা করেন। স্থানীয়রা তাকে আটক করে এবং তাঁর কষ্টের কথা শুনে, শিশুটিকে লালন-পালনের দায়িত্ব নিতে সম্মত হন রুনা আক্তার নামে এক নারী। পরে, রুনা আক্তারকে লিখিতভাবে শিশুটির দায়িত্ব দেওয়ার পর, ৬০০ টাকা উপহার হিসেবে দেওয়া হয় শরিফাকে। কিন্তু শরিফা কিছুদিন পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং শিশুটির প্রতি তাঁর আগের আবেগে পরিবর্তন আসে। পরবর্তীতে শিশুটির পরিবারের লোকজন তাকে ফিরে পেতে গেলে, রুনা আক্তার শিশুটিকে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান। অবশেষে, গত শুক্রবার ইউএনও জাকির হোসেনের হস্তক্ষেপে শিশু নুরী তার মায়ের কাছে ফিরে আসে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী জানিয়েছেন, পরিবারটির জন্য প্রাথমিক সহায়তা করা হয়েছে। তবে স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং তাঁদের স্বাবলম্বী করার জন্য অন্যান্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।