গতকাল সকাল ১০টার দিকে গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (ইইউটি) শিক্ষার্থীদের বহনকারী একটি বাস বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। দুর্ঘটনাটি ঘটে জেলার উদয়খালী এলাকায়, যেখানে বাসটি গন্তব্য থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। বাসের দরজার পাশে থাকা তিনজন গুরুতর আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। নিহতদের মধ্যে ছিল নাঈম। তিনি ইইউটির মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
আজ ভোরে নাঈমের মরদেহ ফেনী সদর উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে পৌঁছায়। সকালে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ফতেহপুর ঈদগাহ ময়দানে, যেখানে সহপাঠী, আত্মীয়স্বজন এবং এলাকার হাজারো মানুষ উপস্থিত ছিল। জানাজার পর, তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ঈদগাহ ময়দানে ছিল শোকার্ত মানুষের স্রোত। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী এবং গ্রামের মানুষ নাঈমের বাবাকে সান্ত্বনা দিতে আসেন। তাঁর বাবা, মীর মোতাহের হোসেন, কলেজ শিক্ষক, সন্তানের মৃত্যুতে নির্বাক হয়ে পড়েছিলেন। নাঈম ছিলেন মোতাহেরের দুই ছেলে এবং এক মেয়ে মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান। বড় ভাই বাক্প্রতিবন্ধী হওয়ায় নাঈমের ওপর পরিবারটির অনেক আশা ছিল। কিন্তু চোখের সামনে একথা বিশ্বাস করা কঠিন, যে তাঁর প্রিয় সন্তান এভাবে হারিয়ে যাবে।
নাঈমের জানাজায় আসা লোকজন জানান, তিনি ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল এবং সবার সাথে মিশে চলা একজন ছেলে। গ্রামে গেলে আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীদের সাথে হাসিমুখে কথা বলতেন, খোঁজ নিতেন তাঁদের।
স্বজনেরা জানান, নাঈম ছিল একজন মেধাবী ছাত্র। তিনি ফেনী শহরের হলি ফ্যামিলি ক্রিসেন্ট স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ফেনী পাইলট হাইস্কুলে ভর্তি হন। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে তিনি শীর্ষে ছিলেন। এরপর গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে ভর্তি হয়ে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। কিন্তু তার জীবনের সব স্বপ্ন ঝরে গেল দুর্ঘটনায়।