• বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন

স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন ও আস্থা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়া কমাতে হবে।

Reporter Name / ৪০ Time View
Update : শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর হাজারো মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান, যার ফলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন এবং আস্থার বৃদ্ধি হলে, এই প্রবণতা কমানো সম্ভব হবে।

রাজধানী ঢাকার মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) আয়োজিত একটি সেমিনারে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সেমিনারে স্বাস্থ্য খাতে বিদেশমুখিতা কমানোর জন্য দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন উদ্যোগের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

সেমিনারের উদ্বোধনী বক্তব্যে ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, “স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়ন সাধন করতে হলে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, পাশাপাশি বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতালগুলো দেশে চালু করা এবং বিদেশি চিকিৎসক ও নার্সদের সহজ নিবন্ধন প্রক্রিয়া প্রবর্তন জরুরি।” তিনি আরও বলেন, দেশীয় চিকিৎসা সেবা আরও সমৃদ্ধ ও সহজলভ্য করতে লাইসেন্স ও নবায়ন প্রক্রিয়া জটিলতা দূর করা প্রয়োজন।

ডিসিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দকৃত ৩০ হাজার ১২৫ কোটি টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেন, যা মোট বাজেটের মাত্র ৩.৭৮ শতাংশ। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে আরও বেশি বাজেট বরাদ্দ এবং সুবিধাসমূহ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে, তিনি আরও জানান, দেশে বর্তমানে ৫,৪৬১টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে, যার মধ্যে ১,৮১০টি ঢাকা শহরে অবস্থিত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা সঠিকভাবে পৌঁছাতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে ঢাকার উপর চাপ বাড়ছে।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে খান আজাদ বলেন, “স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি আস্থা কম হওয়ায় বহু মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে আরো উন্নত ও আস্থা অর্জনযোগ্য করে তুললে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা কমানো সম্ভব।”

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. লিয়াকত হোসাইন বলেন, দেশের চিকিৎসকদের মানসিকতা পরিবর্তন এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ প্রাপ্তি গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা সেবা বাড়ানোর জন্য দেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন প্রয়োজন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিকসের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, “বাংলাদেশে একটি মেডিকেল অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা জরুরি, যা স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।”

বিএসএমএমইউর প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, “স্বাস্থ্য খাতে আস্থা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার মানকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করা হলে এটি স্বাস্থ্যসেবা-পর্যটনে রূপান্তরিত হতে পারে।”

অপরদিকে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বাসার মো. জামাল জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে ১ লাখ ৩৪ হাজার চিকিৎসক রয়েছেন, যার মধ্যে ৩৩ হাজার সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত। তিনি বলেন, “এটি একটি ভালো লক্ষণ যে, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১০ হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে, যা বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবার উন্নতির ইঙ্গিত দেয়।”

বাংলাদেশ সোসাইটি অব ইমার্জেন্সি মেডিসিনের সেক্রেটারি জেনারেল মীর সাদউদ্দিন আহমেদ বলেন, “কোভিড মহামারির সময় কেউ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাননি, যা আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা প্রমাণ করে।”

অর্থাৎ, বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা কমাতে হলে দেশের স্বাস্থ্যখাতে আস্থা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। উন্নত অবকাঠামো, আধুনিক প্রযুক্তি, প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য আরও সুযোগ-সুবিধা এবং সরকারি সহায়তা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।


More News Of This Category
https://slotbet.online/