বিশ্বব্যাপী মিঠাপানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে, যার প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। বিজ্ঞানীরা জানান, গত এক দশকে বিশ্বের তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে মিঠাপানির পরিমাণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব পড়ছে পৃথিবীর পানির উৎসগুলোর উপর। স্যাটেলাইট থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে গবেষকরা ২০১৫ সাল থেকে প্রায় ২৯০ কিউবিক মাইল স্বাদুপানি কমে যাওয়ার পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছেন। এর মানে, পৃথিবীর নদী, হ্রদ ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রায় এক সেন্টিমিটার কমে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পানি হারানোর মূল কারণ সম্ভবত এল নিনো নামে পরিচিত একটি আবহাওয়া পরিবর্তন যা পানির স্তরে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাতে পারে। ২০১৫ সালের পর থেকে বিশ্বের কিছু অঞ্চল অত্যন্ত উষ্ণ হওয়ার কারণে মিঠাপানি হ্রাস পেয়েছে, তবে তা এখনও পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার হয়নি। এমনকি ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত লা নিনা চক্রের শীতলতা সত্ত্বেও স্বাদুপানির পরিমাণ পুনরুদ্ধার হচ্ছে না।
নাসার বিজ্ঞানী ম্যাথিউ রোডেল জানিয়েছেন, তাপমাত্রার অতিরিক্ত বৃদ্ধি পানির স্তরে পরিবর্তন আনলেও এটি সরাসরি মিঠাপানির পরিমাণের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় মাধ্যাকর্ষণের শক্তি ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেখানে পানির পরিমাণ বেশি, সেখানে মহাকর্ষীয় শক্তি অনেক বেশি থাকে। ফলে, পানির পরিমাণ কমলে এই শক্তি হ্রাস পায়, যা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।
বিশ্বের মোট মিঠাপানির পরিমাণ প্রায় ১৪ মিলিয়ন কিউবিক মাইল, এবং এই পরিমাণের বেশিরভাগই বরফ এবং হিমবাহের মধ্যে লুকানো থাকে। তবে, ক্রমবর্ধমান গ্লোবাল তাপমাত্রার কারণে বাষ্পীভবন এবং বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ধারণের ক্ষমতা বাড়ছে, যা পানির প্রাপ্যতা কমিয়ে দিচ্ছে। একদিকে, পৃথিবীজুড়ে নানা ধরনের খরা পরিস্থিতি তীব্র হচ্ছে, অন্যদিকে তাপমাত্রার পরিবর্তন স্বাভাবিক জলবায়ু চক্রে বাধা সৃষ্টি করছে।
১৯৮০-এর দশকে পৃথিবীর মিঠাপানি পরিমাণে কিছুটা কমে গিয়েছিল, তবে প্রকৃতি নিজেই তা পুনরুদ্ধার করেছিল। বর্তমানে যেভাবে পরিস্থিতি চলছে, তা আবার কখন স্বাভাবিক হবে, সে বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা।