আলুর দাম বৃদ্ধি নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এবং বিশেষজ্ঞরা একটি ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের কথা উল্লেখ করছেন, যারা অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া, বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্স কমিটি এবং জেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা না করায় মজুতদাররা দাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন। হিমাগারে আলুর মজুত কমে যাওয়াও দাম বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল আলুর দাম বাড়ানোর পেছনে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের ভূমিকা স্বীকার করেছেন এবং তিনি বলেছেন, “এ বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে।” গত ১৪ নভেম্বর থেকে রংপুর জেলা স্কুলের সামনে সরকারি দামে আলু বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর রংপুর জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১২ নভেম্বর পর্যন্ত জেলার ৪০টি হিমাগারে প্রায় ১২ হাজার ৫২৪ টন খাবার আলু এবং ৬২ হাজার ৩৪৪ টন বীজ আলু মজুত ছিল। তবে ১৪ নভেম্বর বিকেলের পর হিমাগার ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে যে, মজুতের পরিমাণ বেড়ে ১৫ হাজার ৪৫৮ টন খাবার আলু এবং ৪২ হাজার ৪৫০ টন বীজ আলু হয়ে গেছে।
আলুচাষিরা জানিয়েছেন, গত মৌসুমে তাঁরা প্রতি কেজি আলু ২৩ টাকায় বিক্রি করেছেন। এখন সেই আলু হিমাগারে রেখে পাইকারি দামে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা, খুচরা বাজারে ৭০ টাকা। আলুর দাম বৃদ্ধির কারণে অনেক কৃষক নিজেদের উৎপাদিত আলু কিনে খেতে পারছেন না।
রংপুর অঞ্চলের চাষিরা এবং ব্যবসায়ীরা এই দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে হিমাগারের মজুত বৃদ্ধি এবং ব্যবসায়ীদের লাভের খোঁজে দাম বাড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরছেন। তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা বিশেষভাবে হিমাগারে আলু রাখার পরে বাজারে সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছেন। তবে প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা এই সুযোগে মুনাফা কামানোর সুযোগ পাচ্ছেন।
এ বিষয়ে তৌফিক আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য বলেন, “আমরা অভিযান চালিয়েছি এবং ব্যবসায়ীদের জরিমানা করেছি, তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সমস্যা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করতে না পারায় আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে সুফল আসছে না।”
রংপুর জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত এক সপ্তাহে তাদের টাস্কফোর্স কমিটি ৯টি অভিযান পরিচালনা করেছে এবং ১০টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা বাজার মনিটরিং এবং হিমাগার পরিদর্শনসহ নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছি, তবে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়েছে।”
এ পরিস্থিতিতে, আলু বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে এবং কৃষক-ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে আরও কঠোর হতে হবে।