জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা: শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত ঝুঁকির মুখে, বেকারত্বে উদ্বেগজনক বৃদ্ধি
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে শিক্ষাব্যবস্থার অবনতির কারণে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত আজ এক কঠিন সংকটে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশের উচ্চশিক্ষায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়াশোনা করছেন। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা ও উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের মধ্যে বেকারত্বের হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে স্নাতক শেষে চাকরির সুযোগ প্রায় একেবারে কমে গেছে। এই বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকারত্বের হার যথাক্রমে ৭৪%, ৭১%, ৬৬%, এবং ৬৯% এর মতো। অর্থাৎ, স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করলেও চাকরি খোঁজার দুর্বিসহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতার কারণেই এই বেকারত্বের হার বেড়েছে। কলেজগুলোতে শিক্ষকরা অনেক সময় ক্লাসে আসার জন্য উৎসাহিত হন না, পাঠদানের প্রতি অবহেলা দেখা দেয় এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক না হওয়ার কারণে শিক্ষার মান ক্রমেই নেমে যাচ্ছে। এছাড়া, কলেজগুলোর কার্যক্রম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শিক্ষার্থীরা শুধু ফরম পূরণ করেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন, তবে কলেজে আসার প্রয়োজন মনে হয় না।
আরেকটি গুরুতর সমস্যা হলো শিক্ষকের সংখ্যা। অনেক কলেজে একটি বিভাগের জন্য একজন শিক্ষকই একমাত্র দায়িত্ব পালন করছেন, যা একটি বিভাগের কার্যক্রম চালানোর পক্ষে যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে, কিছু কলেজে একটি বিভাগের জন্য ১৬-১৭ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে, কিন্তু সেখানেও শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসেন না এবং শিক্ষকদের অধিকাংশ সময় তাদের পাঠদানের সুযোগও পাওয়া যায় না।
এই শিক্ষাব্যবস্থার সংকট কাটাতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনায় একটি মৌলিক পরিবর্তন প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাসে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা উচিত, এবং শিক্ষকদের অবশ্যই নিয়মিত ক্লাস নিতে হবে। এ ছাড়া, কলেজগুলোর মধ্যে শিক্ষকদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে যাতে প্রতিটি কলেজে যথেষ্ট শিক্ষক থাকেন।
এ ধরনের সংকট মোকাবেলা করতে সরকারের, শিক্ষাবিদদের, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এই সমস্যা সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি এবং ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠন সম্ভব।
https://slotbet.online/