যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম স্লুইসগেট এলাকায় চিত্রা নদীর পাড়ে একটি ছোট দোকানে শিঙাড়া, আলুচপসহ নানা ধরনের তেলে ভাজা খাবার বিক্রি করেন রেহেনা বেগম। প্রায় এক দশক ধরে এই ব্যবসা করে নিজের সংসার চালিয়ে আসছেন তিনি।
রেহেনা বেগমের দোকানটি একটি ছোট টিনের ছাপরায় অবস্থিত, যার সামনে মাটিতে রাখা একটি কাঠের চৌকি, উপরে পলিথিন বিছানো। ছোট একটি কাঠের বাক্সে রাখা হয় তাজা শিঙাড়া, আলুচপ, পেঁয়াজু, বেগুনি, পাঁপড় ও সেদ্ধ ছোলা। সারা দিনব্যাপী, বিশেষ করে ধলগ্রাম বাজারের হাটে ভিড় বাড়লে রেহেনার দোকানে তেমনই ব্যস্ততা বেড়ে যায়।
ধলগ্রাম বাজারটি এক প্রাচীন হাট, যা প্রতি সপ্তাহে বুধবার ও শনিবার বসে। বাজারে দোকানপাটের সংখ্যা প্রায় ২৭৫ থেকে ২৮০টি। রেহেনার দোকানটি এখানে একটি জনপ্রিয় স্থান, যেখানে বসে মানুষ শিঙাড়া, আলুচপ এবং অন্যান্য তেলে ভাজা খাবার খেয়ে থাকেন। বাজারের পাশের নদীর পাড়ে এই দোকানটি প্রতি দিন ভোরে খোলে এবং সন্ধ্যার পর প্রায় রাত আটটা পর্যন্ত চলে।
রেহেনা জানান, তিনি প্রতিদিন প্রায় ১৫০টি শিঙাড়া, ২ কেজি আটার পেঁয়াজু, এক কেজি আলুচপ, এক কেজি ছোলা, একটি বড় বেগুনের ২০টি বেগুনি, এবং আড়াইশো গ্রাম পাঁপড় তৈরি করেন। সপ্তাহে হাটের দিনগুলোতে তার উৎপাদন আরও বাড়ে। তিনি বলেন, “খরচ বাড়লেও, দাম একই রকম থাকায় পরিবার চালাতে কিছুটা কষ্ট হয়। তবে, বাধ্য হয়ে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।”
রেহেনা বেগমের দোকানে শিঙাড়া, আলুচপ, বেগুনি, পেঁয়াজু, ছোলা বিক্রি হয় পাঁচ টাকা, ১০ টাকা এবং ৪ টাকা মূল্যে। তিনি বলেন, “সকালে শুরু করি এবং রাত আটটা পর্যন্ত কাজ করি। স্বামী আমার সাহায্যে আসে। দিনভর সবকিছু প্রস্তুত করতে বেশ কষ্ট হয়, কিন্তু এটাই আমাদের জীবিকা।” তার দোকানের ভাড়া মাসে ৩০০ টাকা, এবং দৈনিক আয় সপ্তাহের সাধারণ দিনগুলোতে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, এবং হাটের দিনগুলোতে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার মতো হয়।
রেহেনার জীবনের গল্পের সাথে অন্য অনেকের জীবনও জড়িয়ে। কবিরভিটা গ্রামের কৃষক আসিবুল সরদার বলেন, “১০ বছর ধরে এখানে শিঙাড়া, আলুচপ খেতে আসি। রেহেনার শিঙাড়া আলুচপ খুব ভালো, তাই মাঝে মাঝে এসে খেয়ে যাই।”
রেহেনা বেগমের সংগ্রামী জীবন এবং ব্যবসার সফলতা, পরিবারের জন্য তার প্রতিনিয়ত কঠোর পরিশ্রমের ফল। শিঙাড়া ও আলুচপের দোকান চালিয়ে তিনি শুধু সংসারই চালাচ্ছেন না, বরং এলাকার মানুষের কাছেও হয়ে উঠেছেন এক পরিচিত মুখ।