ড. ইউনূস আরো বলেন, ‘‘আমার কোনো দল বা অন্য কোনো দলের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই, আমি রাজনীতিকদের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়িত করার জন্য সহযোগিতা করছি।’’ অর্থাৎ, তিনি নিজে রাজনৈতিক দলের কোনো পক্ষ নেন না, বরং তারা যে সিদ্ধান্ত নেবে, সে অনুযায়ী সহায়তা করার জন্য প্রস্তুত।
এছাড়া, তিনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও কিছু মন্তব্য করেছেন। বিশেষত, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে দেওয়া মন্তব্যের প্রেক্ষিতে, ড. ইউনূস বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হয়তো বাংলাদেশ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানেন না।’’ তিনি আরো যোগ করেন, ‘‘এই ধরনের অপপ্রচার বিশ্বব্যাপী ছড়ানো হচ্ছে, কিন্তু যখন তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে আরও জানবেন, তখন অবাক হবেন যে তাকে কীভাবে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে।’’
এ প্রসঙ্গে, ড. ইউনূস বলেন, ‘‘বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মতো ভারতও বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন, উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে সম্মানিত করবে।’’ তবে তিনি ভারত সরকারকে সংখ্যালঘু নির্যাতন বা সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন। তার মতে, এসব বিষয় ‘অপপ্রচার’ এবং তাদের বাস্তব পরিস্থিতি একে অপরের সাথে মেলে না। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এরকম পরিস্থিতি নেই, এগুলো শুধু গুজব।’’
এই একই ধারায়, ড. ইউনূস সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময় বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদি আমাকে স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি কোনো ধরনের অবিচার হচ্ছে, কিন্তু আমি তাকে বললাম, এগুলো পুরোপুরি গুজব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যারা এসব খবর প্রচার করছে, তারা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।’’
একটি প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, ‘‘আমি মনে করি, আমাদের সরকারের অধীনে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করতে যথেষ্ট চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে, যদি কোনো সংঘাত বা সহিংসতা ঘটে, তার পেছনে কিছু বিশেষ গোষ্ঠী থাকতে পারে, কিন্তু এসব ঘটনার সঙ্গে সরকার বা রাষ্ট্রের কোনো সম্পর্ক নেই।’’
এছাড়া, তিনি সাংবাদিকদের উপর চাপ সৃষ্টি বা সাংবাদিকদের এক্রিডিটেশন বাতিল করার বিষয়েও মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছি, এবং আইন অনুসরণ করে কাজ করছি। যদি কেউ মনে করেন, আমাদের প্রয়োগ সঠিক হয়নি, তারা আমাদের বিরুদ্ধে যুক্তি দিতে পারেন, তবে আইন পরিবর্তনের জন্য আমরা প্রস্তুত।’’
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক প্রসঙ্গে, ড. ইউনূস বলেন, ‘‘বাংলাদেশ একটি নতুন শাসন ব্যবস্থার অধীনে মুক্ত হয়েছে, যেখানে জনগণ এখন তাদের অধিকার নিয়ে সচেতন। ভারত সরকারকে উচিত আমাদের এই মুক্তিকে উদযাপন করা এবং সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করা।’’
ড. ইউনূস কিছুটা রাজনৈতিক বিতর্কেরও অবতারণা করেন, যেখানে তিনি শেখ হাসিনার ভারত সফরকে কেন্দ্র করে বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতের ভূখণ্ডে আছেন, তবে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হওয়া উচিত।’’
শেষে, ড. ইউনূস বলেন, ‘‘বর্তমানে শেখ হাসিনার দেশে ফেরার বিষয়ে সরকারের সব আইনি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, এবং এটি খুব শিগগিরই বাস্তবায়িত হবে। তবে আমাদের সরকারের মেয়াদ ছোট হওয়ায় কিছু বিষয় একসাথে সমাধান করা কঠিন, তবে পরবর্তী সরকার এর সমাধান করতে সক্ষম হবে।’’
ড. ইউনূসের মন্তব্যগুলো বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে, যেখানে তিনি বাংলাদেশের জনগণের অধিকারের প্রতি অঙ্গীকার এবং দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।