এদিন বেলা ১:৩০টার দিকে, উপজেলা সদরের প্রতাপগঞ্জ বাজারে অবস্থিত মুসা মার্কেটের কাছে সম্মেলন বিরোধী গ্রুপ এবং সম্মেলন সমর্থক গ্রুপের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। উভয় পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের ফলে ৫০ জনের বেশি আহত হন, যার মধ্যে ৩০ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গুরুতর আহত চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনার পেছনে মূলত বিএনপির উপজেলা নেতৃত্ব নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল খালেক, অন্যদিকে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মেহেদী হাসান (পলাশ) এবং তাঁর অনুসারীরা সম্মেলনের পক্ষে রয়েছেন। এই দুই নেতার মধ্যে সংঘাতের শেকড় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে একটি তিক্ত লড়াইয়ে গভীরভাবে গেঁথে রয়েছে।
২০২১ সালে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান ৩১ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন, যেখানে আবদুল খালেককে ১ নম্বর সদস্য এবং মেহেদী হাসানকে ২ নম্বর সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। কিন্তু এই কমিটি নিয়ে ব্যাপক অমিল দেখা দেয়, এবং দুই পক্ষের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে ওঠে। গত নির্বাচনে উভয়েই মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন এবং তাদের মধ্যে এই বিরোধ তীব্র হয়েছে।
পরে, ২৩ অক্টোবর, জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় যে, ২০ নভেম্বর বাঞ্ছারামপুরে উপজেলা ও পৌর বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন পক্ষে যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে মেহেদী হাসান, লিয়াকত আলী এবং এ কে এম মুসা শামিল। তবে, আবদুল খালেক এবং তার অনুসারীরা সম্মেলন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন।
সোমবার বেলা দেড়টার দিকে, আবদুল খালেক, রফিক সিকদার, জিয়া উদ্দিন এবং সাইদুজ্জামান কামালের নেতৃত্বে সম্মেলনবিরোধী একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি উপজেলার প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে মুসা মার্কেটের দিকে এগিয়ে যায়, যেখানে সম্মেলনপন্থী পক্ষ ইটপাটকেল এবং কাচের বোতলসহ আক্রমণ চালায়। সংঘর্ষ চলাকালীন সময় মুসা মার্কেটের সামনে থাকা পাঁচটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং কিছু দোকান ভাঙচুর করা হয়।
এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করতে সক্ষম হয়। তবে সংঘর্ষের কারণে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল খালেক অভিযোগ করেছেন যে, তাদের বিরুদ্ধে একটি অবৈধ কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তারা দীর্ঘ সময় মাঠে না থাকলেও এখন আওয়ামী লীগের সাথে যোগসাজশ করে সম্মেলন আয়োজন করছে। তিনি বলেন, এই সম্মেলনকে তিনি অবৈধ দাবি করছেন এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলে হামলা চালানো হয়েছে।
অপরদিকে, সম্মেলনপন্থী নেতা এ কে এম মুসা বলেছেন, খালেক ও তার অনুসারীরা বাইরে থেকে ভাড়াটে লোক এনে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। তিনি আরও দাবি করেন, খালেকের নেতৃত্বে দলীয় দোকানগুলোতে লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে এবং সন্ত্রাসী অস্ত্রও ব্যবহার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় পুলিশ এবং সেনাবাহিনী বিষয়টি তদারকি করছে এবং ঘটনার মূল perpetrators’ চিহ্নিত করার জন্য তদন্ত শুরু করেছে।