রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে 'বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন' শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মুশতাক খান আরও বলেন, কিছু কিছু বিষয় যেমন সহজে সমাধান করা সম্ভব, কিন্তু বেশ কিছু জটিল বিষয় আছে যা শুধু আইন করে ঠিক করা সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের কনিষ্ঠ চিকিৎসকদের জন্য একটি নিয়ম রয়েছে—তাদের কিছু সময় গ্রামাঞ্চলে গিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হবে। তবে, এই নিয়ম বাস্তবায়নে নারীদের নিরাপত্তা ও নাগরিক সেবার অভাব বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুশতাক খান মনে করেন, আইন প্রণয়ন দিয়ে এই ধরনের সামাজিক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়, বরং বৃহত্তর ক্ষমতার কাঠামোতে পরিবর্তন আনা জরুরি।
দুর্নীতির মূল কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, সমাজে শক্তিশালী রাজনৈতিক দলগুলো এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি যোগসাজশ তৈরি হয়, যার ফলে আইনি ব্যবস্থার প্রভাব কমে যায়। মুশতাক খান বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিসরে আরও পরিবর্তন আনা দরকার। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এবং প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একমাত্র কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে।
এছাড়া, অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী নেপালের পলিসি এন্ট্রাপ্রেনিউয়ার্স ইনকরপোরেটেডের পরিচালক অনুরাগ আচারিয়া বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে দুর্নীতি একটি গভীর সমাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেপালের রাজনৈতিক ব্যবস্থায়ও দুর্নীতির অবনতি ঘটছে, এবং তা তরুণ সমাজের জন্য হতাশাজনক অবস্থায় পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানের অ্যাকাউন্টিবিলিটি ল্যাবের নির্বাহী পরিচালক ফায়াজ ইয়াসিন ভিদালও দুর্নীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, লোভ ও স্বার্থের কারণে মানুষের মধ্যে দুর্নীতির প্রবণতা বেড়ে যায়, এবং অনেক ক্ষেত্রে তারা বিদেশে অর্থ পাচার করে।
মুশতাক খান এর সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, দুর্নীতি রোধে কেবল ব্যক্তিগত নৈতিকতার ওপর নির্ভর করা যথেষ্ট নয়, বরং দুর্নীতির চক্র ভাঙতে হলে রাজনৈতিক শক্তির ভারসাম্য থাকতে হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, রাজধানীর গুলশান এলাকায় পরিবহন ব্যবস্থা যতটা নিয়ম মেনে চলে, অন্যদিকে রাজধানীর উপকণ্ঠে উল্টো চিত্র দেখা যায়, যেখানে নিয়মের বাইরে যাওয়া ঠেকানোর জন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও সামর্থ্য রয়েছে। সুতরাং, বাস্তবিকভাবে সমাজের ক্ষমতায়ন ও সংস্কার জরুরি।
এদিনের অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ থেকে রাজনীতিবিদ, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন এবং দুর্নীতি, মানবাধিকার, ভূরাজনীতি ও অপতথ্য বিষয়ক আলোচনা করেন।