বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য ও বস্ত্র উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং এর ভবিষ্যত সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “একজন সাধারণ ভোক্তার কাছে সুদের হার বা সামষ্টিক অর্থনীতির বিশ্লেষণ হয়তো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জীবিকা নির্বাহের জন্য কীভাবে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনবেন, কীভাবে খাবারের প্লেট বা জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো যাবে।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি এমন একটি বাস্তবতা তুলে ধরেন, যেখানে দেশের সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার সুবিধা নিশ্চিত করাই সরকারের একান্ত দায়িত্ব।
সেখ বশির উদ্দিন আরো বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি মানুষের জন্য স্বস্তির ব্যবস্থা করা উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। সরকারের সকল সদস্য এ বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল, যা তাদের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং একাগ্রতার প্রতিফলন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমরা দেখেছি যে দেশের বাজারে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে এবং কিছু নির্দিষ্ট ব্যবসায়ী গোষ্ঠী একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করেছে।” এই পরিস্থিতি দেশের ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা কমিয়ে দিয়েছে এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস পেয়েছে। সেখ বশির উদ্দিন বিশ্বাস করেন, যদি সরকারের লক্ষ্য হয় সত্যিকার অর্থে মানুষের জন্য কিছু করতে, তবে প্রতিযোগিতামূলক বাজারের পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং জনগণকে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা জরুরি।
দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের দিক থেকে, তার মতে, "বাণিজ্য সক্ষমতা বৃদ্ধির একমাত্র উপায় হলো আরও বেশি মানুষকে ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত করা।" তিনি আরও বলেন, সমাজের অনেক অংশের মানুষ বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কার্যকরী হলেও তাদের কাছে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা নেই। এই প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিগত শক্তি পুনরায় কার্যকরী করা সম্ভব।
একইসঙ্গে, সেখ বশির উদ্দিন সরকারের যে উদ্দেশ্য তা স্পষ্ট করে বলেছেন—"রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিনিময়ে, দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি।" তিনি বিশ্বাস করেন যে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে পরিচালিত করা উচিত যাতে সুশাসন সহজ হয় এবং দুর্নীতি ও অপব্যবহার কঠিন হয়ে ওঠে। তার মতে, সরকারের প্রয়াস হতে হবে এমন একটি ব্যবস্থা তৈরির দিকে, যেখানে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার জনগণের কাছে পৌঁছাবে।
দেশের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি এবং অর্থনীতির ভবিষ্যত সম্পর্কে তার মন্তব্যে আরও পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে দেশের অর্থনীতির সংকটকালীন চিত্র। সেখ বশির উদ্দিন বলেন, “আমরা অর্থনৈতিক উন্নতি দেখলেও সামাজিকভাবে অনেক কিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এনে দেশে সামাজিক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা একমাত্র উপায়।” তিনি আরও বলেন, “এতকিছু পিছনে ফেলে, দেশে একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে না পারলে, সে অর্থনীতি কখনই স্থায়ীভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না।”
এছাড়া, দেশের বিভিন্ন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সৃষ্ট আর্থিক অস্থিরতা নিয়েও তিনি তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার মতে, কিছু ব্যাংক অনৈতিকভাবে কাজ করেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। তবে, তিনি আশাবাদী যে, এই পরিস্থিতি শিগগিরই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে এবং সঠিক নিয়ন্ত্রণে এর সমাধান পাওয়া যাবে।
সর্বোপরি, সেখ বশির উদ্দিনের অভিমত হলো—"দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের মধ্যে সঠিক সমন্বয় হলে, দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।" তিনি দেশের সকল স্তরের জনগণকে, বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের, একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে দেশের আর্থিক ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী ও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠতে পারে।