• বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০২:৪৮ অপরাহ্ন

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: চাহিদা ও স্বার্থের পুনর্গঠন প্রয়োজন

Reporter Name / ৩৬ Time View
Update : শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের চাহিদার তুলনায় বাংলাদেশের চাহিদাকেই প্রথমে গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান। সম্প্রতি একটি আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ভারতের চাহিদা আমাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয় হতে পারে না। প্রথমে আমাদের জাতীয় চাহিদাগুলো বুঝতে হবে, তারপর ভারতের চাহিদাকে সেগুলির আলোকে বিশ্লেষণ করতে হবে।’’

হোসেন জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই রয়েছে, তবে এটি কখনোই একতরফা হতে পারে না। তিনি ভারতের নামের আগে ‘‘বৃহৎ প্রতিবেশী’’ শব্দটি ব্যবহার করাকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যা হিসেবে দেখেন। তাঁর মতে, ‘‘বৃহৎ’’ শব্দটি এক ধরনের আধিপত্যের প্রতীক হতে পারে, যা বাংলাদেশির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করতে পারে।

ভারতকে ‘বৃহৎ প্রতিবেশী’ হিসেবে আখ্যায়িত করার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘‘প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য জরুরি, তবে সেটা হতে হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমতা ভিত্তিক।’’

ভারতের আধিপত্যবাদী মনোভাব নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যে কিছু বাস্তবতা রয়েছে, যা অস্বীকার করা যাবে না। অসম চুক্তি, অসম অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং ভারতের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের ঘটনা সবই এসব বাস্তবতার উদাহরণ।’’ তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে নীতি গ্রহণের সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দেওয়া হয়েছে, এবং এক্ষেত্রে দেশীয় শক্তির পুনর্গঠনের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন করতে হলে প্রথমে নিজেদের সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। আমাদের জনগণকে শক্তিশালী করতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও আত্মবিশ্বাসী হতে পারি।’’

এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনে করেন, ভারত বাংলাদেশে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় রাখার মাধ্যমে তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে চায়। তিনি বলেন, ‘‘ভারতের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ, হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা, এবং মৌলবাদের উত্থান—এই বিষয়গুলো উত্থাপন করে ভারত বাংলাদেশে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করছে।’’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মধ্যে নতুন একটি আখ্যান তৈরি করা প্রয়োজন।’’

তিনি বলেন, ‘‘পারস্পরিক সম্মান, পরস্পরের স্বার্থের প্রতি শ্রদ্ধা এবং কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করার নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নত করা যেতে পারে।’’

লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি মনে করেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ভারত বিষয়ে দুটি কৌশল অবলম্বন করেছে—একটি হল ভারতের প্রতি আনুগত্য এবং অপরটি হল ভারতবিরোধিতা। এ দুটি কৌশলের ফলস্বরূপ বাংলাদেশ কখনোই ভারতের কাছ থেকে ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারেনি।

পারভেজ জানান, ‘‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। বাংলাদেশের উচিত সার্কের পুনর্গঠনসহ আঞ্চলিক সহযোগিতার উপর জোর দেওয়া।’’

বাংলাদেশের নদীসংকট ও পানি বণ্টন নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক চলছে। রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন দাবি করেছেন, বাংলাদেশে ৫৬টি আন্তসীমান্ত নদী নয়, আসলে ১২৩টি নদী রয়েছে, যার পানি বাংলাদেশি জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের উন্নতির জন্য আমাদের আরও একটি বাস্তবসম্মত পন্থা অবলম্বন করতে হবে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘পানির ন্যায্য হিস্যা অর্জন করতে হলে এক বা দুটি বড় চুক্তি যথেষ্ট। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, এবং মেঘনা—এই তিনটি নদী নিয়ে আলাদা আলাদা চুক্তি করার চেয়ে একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক চুক্তি কার্যকরী হতে পারে।’’

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় একমত হতে দেখা গেছে, বর্তমান কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। একদিকে ভারতের প্রতি আনুগত্যের রাজনীতি আরেকদিকে ভারতবিরোধিতার পক্ষ থেকে কোনো ফলাফল আসেনি। এখন সময় এসেছে সম্পর্কের মধ্যে গঠনমূলক পরিবর্তন আনার।

এটির জন্য সমগ্র জাতিকে প্রস্তুত থাকতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আত্মবিশ্বাসীভাবে তাদের স্বার্থ রক্ষা করা যায় এবং পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ, পারস্পরিক সম্মানজনক সম্পর্ক বজায় রাখা যায়।


More News Of This Category
https://slotbet.online/