ইয়াজুজ-মাজুজ, যার অর্থ ‘দ্রুতগামী’ বা ‘তরঙ্গসম,’ এমন একটি রহস্যময় সম্প্রদায় যাদের বিষয়ে কোরআন ও বাইবেলে উল্লেখ পাওয়া যায়। তাঁদের বংশধর হিসেবে আদম (আ.)-এর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ধরা হয়, এবং তাঁরা কিয়ামতের আগে পৃথিবীতে উদ্ভূত হবেন এবং ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালাবেন বলে আসমানি গ্রন্থগুলোতে বার্তা রয়েছে।
কোরআনে ইয়াজুজ-মাজুজ সম্পর্কে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। সুরা কাহাফে বলা হয়েছে, শাসক জুলকারনাইন একটি প্রাচীর নির্মাণ করে তাঁদের আটকে রেখেছিলেন, যা কিয়ামতের আগে ভেঙে পড়বে এবং তাঁরা বেরিয়ে আসবেন। এর প্রভাবে পৃথিবীতে এক ধরণের বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। তখন আল্লাহর ইচ্ছায় প্রাচীরের নিচে নেমে আসা ইয়াজুজ-মাজুজ নদীর পানি খেয়ে ফেলে দেবে এবং তাদের ক্ষতিকর প্রভাব এত ব্যাপক হবে যে, তাঁরা পৃথিবীর সমস্ত জীবন্ত প্রাণীকে ভক্ষণ করবে।
বাইবেলের আদি পুস্তকে তাঁদের হজরত নুহ (আ.)-এর বংশধর বলা হয়েছে। বাইবেলের বর্ণনায় ইয়াজুজ-মাজুজকে এমন এক সম্প্রদায় হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, যাঁদের কেউ অত্যন্ত দীর্ঘ, আবার কেউ খর্বাকৃতির। তাঁদের নিয়ে ঐশ্বরিক ব্যবস্থাপনার বার্তা এবং মানবজাতির প্রতি একটি বড় হুমকির ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে।
ইসলামি বর্ণনায় জুলকারনাইন এমন এক প্রতাপশালী শাসক ছিলেন, যিনি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করে বিশৃঙ্খলকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেন। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, বিশাল লোহার প্রাচীর নির্মাণ করে তিনি ইয়াজুজ-মাজুজকে আটকে রাখেন। মানুষের অনুরোধে, যাতে তাঁরা ইয়াজুজ-মাজুজের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়, তিনি প্রাচীর নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। কিয়ামতের আগে এই প্রাচীর ধ্বংস হয়ে যাবে এবং ইয়াজুজ-মাজুজের বিশাল বাহিনী সারা পৃথিবীজুড়ে আক্রমণ চালাবে।
হাদিসে হজরত ঈসা (আ.)-এর পুনরাগমনের সময় ইয়াজুজ-মাজুজ বেরিয়ে আসবেন এবং পৃথিবীর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বেন। তাঁরা এমনভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালাবেন যেন আকাশে পৌঁছাতে পারলে সেটিকেও ধ্বংস করতে চায়। হজরত ঈসা (আ.)-এর দোয়ার পর আল্লাহ তাঁদের শরীরে বিশেষ ধরনের পোকা পাঠিয়ে তাঁদের ধ্বংস করবেন। তাদের লাশ পৃথিবীজুড়ে পড়ে থাকবে, যা পরবর্তীতে বিশেষ পাখির মাধ্যমে সরিয়ে নেওয়া হবে।
এভাবে ইয়াজুজ-মাজুজ কোরআন ও বাইবেলের আলোচনায় এমন এক রহস্যময় ও বিপজ্জনক সম্প্রদায় হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন, যাঁদের আবির্ভাবে পৃথিবী এক ভয়ংকর অবস্থার সম্মুখীন হবে এবং আল্লাহর ইচ্ছাতেই তাঁদের পরিণতি ঘটবে।
https://slotbet.online/